
বগুড়া সংবাদদাতা:
বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকায় এক রিকশাচালককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে। নিহত শাকিল মিয়ার (৪৫) ‘অপরাধ’ ছিল তিনি নিজের স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জিতু ইসলামের (৫০) সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি।
ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হন আলোচিত এই নেতা জিতু ইসলাম। পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
এলাকাজুড়ে আতঙ্কের নাম জিতু
ফুলবাড়ী ও শিববাটি এলাকায় জিতু ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্তত ৩০ জন ক্যাডার নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘জিতু বাহিনী’, যারা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এলাকায় মহড়া দিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “নতুন বাড়ি তুললেও চাঁদা দিতে হতো, দোকান খুললেও দিতে হতো। কেউ টাকা না দিলে হুমকি কিংবা হামলার মুখে পড়ত।”
রাজনীতি আর অপরাধে মিশ্র চেহারা
২০০৩ সালে একটি হত্যা মামলায় ১৪ বছরের সাজা পাওয়া জিতু ইসলাম পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হন। এরপর তিনি যুবলীগের কিছু নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম পান।
বগুড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকেই বলছেন, “এই ধরনের সন্ত্রাসী রাজনীতির ছায়ায় থাকার সুযোগ পেয়েই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।”
হত্যাকাণ্ড ও মামলার অগ্রগতি
শাকিল মিয়ার স্ত্রী মালেকা বেগম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে আরও ৮–১০ জন অজ্ঞাতনামা হিসেবে যুক্ত আছেন। পুলিশের তথ্য মতে, এই মামলায় জিতু ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।
দলের অবস্থান ও জনমতের চাপ
জিতুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর রাতেই তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এমন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে কীভাবে একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হলো?
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম বলেন, “একজন চিহ্নিত অপরাধীকে দলে পদ দিয়ে শুধু বহিষ্কার করলেই দায় শেষ হয় না। তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এলাকার মানুষের চোখে যা দেখা যায়
যদিও জিতু গ্রেপ্তার হয়েছে, তার বাহিনী যে পুরোপুরি থেমে গেছে—তা বলছেন না স্থানীয়রা। এখনো ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, “দুই বছরে ৫০ হাজার টাকার জিনিস বাকিতে নিয়েছে। টাকা চাইতে গেলে মারধর করে। এখনো ভয় পাই।”