খেলা

মা, আমাকে ছেড়ে যেয়ো না’ সেই কথায় বদলে যায় লিনুর জীবনের সিদ্ধান্ত

একসময় জাতীয় টেবিল টেনিস কোর্টে ছিলেন রেকর্ডধারী চ্যাম্পিয়ন। আজ তিনি একজন নির্ভরশীল মা, ভ্রমণপ্রেমী এবং লেখক। কথা হচ্ছে জোবেরা রহমান লিনু নিয়ে যিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এবং স্থান করে নিয়েছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।

সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনজালের এপার-ওপার’ বইটি যেন জীবনের এক গভীর আয়না। শুধু খেলার কাহিনি নয়, বইটিতে উঠে এসেছে একজন নারীর ভাঙা-গড়ার গল্প, একাকিত্বের স্বাদ, আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপট এবং মায়ের রূপে গড়ে ওঠা জীবনের এক অনন্য অধ্যায়।

লিনু জানান, খেলোয়াড়ি জীবনের শেষে এক সময় তিনি হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন। ২০০২ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর একধরনের শূন্যতা ঘিরে ধরে তাঁকে। ঠিক তখনই শুরু করেন বই লেখার কাজ, যা তাঁকে মানসিকভাবে সাহসী করে তোলে।

এই বইয়ে তিনি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন এমন একটি মুহূর্ত যেখানে কিশোর বয়সে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছিলেন। ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে জীবনের দিকে তাকিয়েছিলেন একেবারে ভিন্ন চোখে। সেই মুহূর্তেই নিজেকে শক্তভাবে ধরে রাখেন। জানান, ভেবেছিলাম লাফ দেব, কিন্তু ভয় পেয়ে যাই। তখন বুঝি, বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় সাহস।

বিয়ের পথ না ধরলেও লিনু থেমে থাকেননি। এক ভাইয়ের শিশুকে নিজের কোলের সন্তান হিসেবে তুলে নেন। সেই শিশু তাঁকে মা বলে ডাকেই না, তাঁর জীবনের অভিভাবকত্বও যেন তিনিই। এমন আত্মনিবেদিত ভালোবাসায় গড়ে তোলেন এক পরিপূর্ণ সম্পর্ক।

ব্যক্তিজীবনে প্রেম এসেছিল, তবে কোনোটাই টেকেনি বলে জানান তিনি। আমি একজন রোমান্টিক মানুষ। তবে সম্পর্কগুলো কখনও পরিণতি পায়নি, বলেন লিনু।
তাঁর এই স্পষ্টভাষী স্বীকারোক্তি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে।

খেলাধুলার বাইরে তিনি নাটক, গল্প, কবিতা, প্রযোজনা সব জায়গাতেই রেখেছেন সক্রিয় উপস্থিতি। নিজের স্টাইল ও চিন্তাধারা নিয়ে কখনোই কারও মতের উপর নির্ভর করেননি। তাঁর ভাষায়, “আমি ফ্যাশনের অনুসারী না, নিজের স্টাইলেই বিশ্বাসী।”

৬০ বছর বয়সেও একাই ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন। ভুটান, সুইডেন, ফিনল্যান্ডে ঘুরে বেড়িয়েছেন নিজের মতো করে। তবে আফসোস একটাই বাংলাদেশে নারীর একা ঘোরার নিরাপত্তা এখনও নেই।

লিনু বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল গিনেস রেকর্ডের সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার সময়। আর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার বাবা।

সবশেষে তাঁর কণ্ঠে এক প্রশ্নহীন প্রত্যয় আবার জন্ম নিলে আবারও খেলোয়াড়ই হতাম। বিখ্যাত খেলোয়াড়।

এই আত্মজীবনী শুধু ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য নয়, এটা এক সাহসী নারীর জীবনের ডায়েরি। যেখানে প্রতিটি পাতায় লেখা আছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button