বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ১২ ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, মত দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বয়স বাড়া স্বাভাবিক। কিন্তু বয়স বাড়লেই কি শরীর ভেঙে পড়বে? একেবারেই না। চিকিৎসকদের মতে, বয়স বাড়ার পরও সজীব ও কর্মক্ষম থাকা সম্ভব, যদি প্রতিদিনের খাবারে সচেতনতা রাখা যায়।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের হাড় শক্ত থাকে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় না, এমনকি হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যায়।
আঁশযুক্ত খাবার: হজমে সহায়ক, ওজনে ভারসাম্য
ফল, সবজি, ডাল ও ওটসের মতো আঁশসমৃদ্ধ খাবার হজমশক্তি বাড়ায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, যা আঁশ নিয়মিত খেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতিদিন অন্তত ২১–৩০ গ্রাম আঁশ খাওয়া প্রয়োজন।
গোটা শস্যের গুরুত্ব
সাদা চালের চেয়ে লাল চাল, ওটস বা গমের রুটি বেশি উপকারী। এতে আছে ভিটামিন বি-৬ ও ফলেট, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত গোটা শস্য খেলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে।

বাদাম: পুষ্টিগুণে ভরপুর
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদিতে রয়েছে এমন উপাদান, যা হৃদরোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ক সচল রাখতে কার্যকর।
পর্যাপ্ত পানি: সহজ কিন্তু উপেক্ষিত
বয়স বাড়লে তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যায়, ফলে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। এটি মনমেজাজ খারাপ, সন্ধিতে ব্যথা ও হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ
ইলিশ, পাঙ্গাশ, রুইসহ অনেক মাছে রয়েছে ‘গুড ফ্যাট’ ওমেগা-৩, যা মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে এবং আলঝেইমার্সের ঝুঁকি কমায়। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

প্রাকৃতিক প্রোটিনের গুরুত্ব
বয়স বাড়লে পেশি দুর্বল হয়ে যায়। ডিম, মুরগির মাংস, দুধ ও দইয়ে থাকা প্রোটিন শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন পাউডারের বদলে প্রাকৃতিক উৎস থেকেই এই পুষ্টি নেওয়া ভালো।
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই, পনিরে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুযায়ী সয়াদুধ বা টোফু থেকেও এটি পাওয়া সম্ভব।
রঙিন ফল ও সবজি
টমেটো, তরমুজ, লাল মরিচে থাকা লাইকোপেন ক্যানসার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ব্রকলি, ফুলকপি ও ব্রাসেলস স্প্রাউটসে থাকা সালফোরাফেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অ্যাভোকাডো ও মিষ্টি আলুর উপকার
অ্যাভোকাডো স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। অন্যদিকে মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ তৈরি করে, যা চোখ ও ত্বকের যত্নে সহায়ক।
মসলা: স্বাদের পাশাপাশি সুস্থতাও
রসুন রক্তনালি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, দারুচিনি কোলেস্টেরল কমায় এবং হলুদ মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়ক। এইসব সাধারণ মসলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকর।
বয়স বাড়া মানেই যে অসুস্থ হয়ে পড়া, তা নয়। জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এনে আমরা নিজেকে আরও বেশি সক্রিয়, মজবুত ও সুস্থ রাখতে পারি। ছোট ছোট পরিবর্তনেই জীবনে আসে বড় ফল।