
শিরোনাম:
পাক সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে দিল্লির কূটনৈতিক চাপ
সংবাদ প্রতিবেদন | ডেস্ক রিপোর্ট:
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এই আমন্ত্রণকে দিল্লিতে অনেকে দেখছেন ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এক বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে।
গত কয়েক সপ্তাহে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলাদা করে দেখাতে চেয়েছিল। এর অংশ হিসেবে দেশটি ৩৩টি দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠায় এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনায় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ প্রমাণ করছে, সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়নি।

এই প্রসঙ্গে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার।” এ বক্তব্যে সরব হয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ব্রাসেলসে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “যারা এখনো সন্ত্রাসবাদকে ছোট করে দেখছে, একদিন তারাই চরম মূল্য দেবে।” তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ওসামা বিন লাদেন বহু বছর পাকিস্তানের সেনা ছাউনির কাছেই নিরাপদে ছিলেন।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও এ ঘটনায় সরকারকে ঘিরে কঠোর ভাষায় প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের দাবি, মোদি সরকারের ‘প্রচারের রাজনীতি’ বাস্তব অর্জনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রিনাতে বলেছেন, “৯০টির বেশি দেশ সফর করেও মোদি কিছুই অর্জন করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার বদলে বরং তারাই নানা পদ পেয়ে যাচ্ছে।”
এই বাস্তবতা আরও কঠিন হয়েছে জাতিসংঘের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির দায়িত্ব পাকিস্তানের হাতে যাওয়ার মাধ্যমে। একদিকে তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির চেয়ারম্যান, অন্যদিকে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছে পাকিস্তান। এই পদগুলো পাওয়ার বিরোধিতা করেছিল ভারত। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের আপত্তি গুরুত্ব পায়নি।
এর পাশাপাশি পাকিস্তান সম্প্রতি তিনটি আন্তর্জাতিক ঋণও পেয়েছে—আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে। ভারত এসব ঋণের বিরুদ্ধে বারবার উদ্বেগ জানিয়েছিল যে, পাকিস্তান এ অর্থ সন্ত্রাসে ব্যয় করতে পারে। কিন্তু সে আশঙ্কাও আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিফলিত হয়নি।
সবশেষে, কুয়েত ১৯ বছর পর পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো যখন ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানবিরোধী জনমত তৈরিতে ব্যস্ত।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অর্জনগুলো ভারতের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ‘হিন্দুত্ববাদী পররাষ্ট্রনীতি’ ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।
বর্তমানে দিল্লির শীর্ষ মহলে এই প্রশ্ন ঘুরছে—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে কেন আন্তর্জাতিক সমাজ সমর্থন করছে না? আর পাকিস্তান কেন বারবার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে জায়গা করে নিচ্ছে?