বিজ্ঞান

ঔষধি উদ্ভিদ কাকে বলে? ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ

ঔষধি উদ্ভিদ: যা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান হতে পারে বা কৃষি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভিদ ছাড়াই তৈরি করা হয়ে থাকে। ঔষধি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ থেকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ঔষধ তৈরি করা হয়।

ঔষধি উদ্ভিদ কাকে বলে | ওষধি গাছ বলতে কী বোঝ

ঔষধি উদ্ভিদ হলো সেই উদ্ভিদ যা মানব স্বাস্থ্যের সেবা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদগুলো চিকিৎসা, রোগ প্রতিরোধ, ওষুধ নির্মাণ এবং বিজ্ঞানীগণের গবেষণা

এবং উন্নত কর্মসূচি সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। কিছু ঔষধি উদ্ভিদের উদাহরণ হলো নিম গাছ, টিউলিপ, ব্রাহ্মি বটী, অ্যালোভেরা, গ্রীন টি, নিয়াম গাছ ইত্যাদি। 

এই উদ্ভিদগুলোর বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, ফুল, ডাল, মানসংখ্যান ইত্যাদি থেকে মেডিসিন তৈরি করা হয়। ঔষধি উদ্ভিদগুলো মূলত প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত,

যা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান হতে পারে বা কৃষি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভিদ ছাড়াই তৈরি করা হয়ে থাকে। ঔষধি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ থেকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ঔষধ তৈরি করা হয়।

ঔষধি উদ্ভিদ এর নাম। ঔষধি উদ্ভিদের তালিকা

ঔষধি উদ্ভিদের নামগুলো অসংখ্য হতে পারে, তবে কিছু প্রমুখ ঔষধি উদ্ভিদের নামগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:

  • নীম (Neem)
  • তুলসী (Tulsi)
  • অশ্বগন্ধা (Ashwagandha)
  • ব্রাহ্মী (Brahmi)
  • গোতু কোলা (Gotu Kola)
  • আলোয় ভেরা (Aloe Vera)
  • টুড়ি (Turmeric)
  • অর্জুন (Arjuna)
  • শতাবরী (Shatavari)
  • গুগল (Guggul)
  • বিভিতকি (Bibhitaki)
  • হরিতাকি (Haritaki)
  • বাকুচি (Bacopa)
  • অসগন্ধি (Osgandha)
  • পুন্নাগ চক (Punnag Chak)

এটা কেবলমাত্র কিছু উদাহরণ, বিশেষত ভারতীয় প্রাকৃতিক ঔষধি উদ্ভিদের নামগুলো। আরো অনেক আছে যা ব্যবহার হয় উদ্ভিদের চিকিৎসায়।

ঔষধি উদ্ভিদ কাকে বলে | ওষধি গাছ বলতে কী বোঝ

ঔষধি উদ্ভিদ নিম

নিম বা Azadirachta indica একটি ঔষধি উদ্ভিদ যা ভারত ও বাংলাদেশে প্রচলিত। এটি মূলত নিম গাছের মূল সংশ্লেষিত। নিম গাছের পাতা, বৃক্ষকক্ষ, গাছের ফুল, ফল ও তেল ব্যবহার করা হয় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে।

নিমে বিভিন্ন গুনাবলী রয়েছে, যা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিমে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার হয়,

যেমন

  • ত্বকের সমস্যা,
  • মাথার চুলের সমস্যা,
  • দন্তের সমস্যা,
  • জোড়াবদ্ধতা,
  • পেটের সমস্যা,
  • ক্ষয় রোগ,
  • মলমূত্রের সমস্যা,
  • খুজলি ইত্যাদি। নিমে অনেক উচ্চারিত ঔষধিক গুণ রয়েছে,

যেমন

  • বিষাক্ততা,
  • ব্যক্তিগত পুষ্টি,
  • অন্তিক্রিয়াবদ্ধতা,
  • জীবানুপক্ষতা,
  • ব্রণনাশক,
  • জ্বরনাশক,
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক,
  • শরীরতে বাদামি জমানো ইত্যাদি। 

নিমের আরও উপকারিতা এবং ব্যবহার নিম্নলিখিত অঞ্চলেই বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

1.ত্বকের যত্ন ও সংরক্ষণ: নিম ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের ছিটানো, গ্লোইং ত্বক, ত্বকের সমস্যার সমাধান, ত্বকের ফোলা এবং ত্বকের ব্যথা মিটানোর জন্য নিম ব্যবহার করা হয়। নিমের উপকারিতা মধুমেহের রোগীদের জন্যও অনেক বেশি।

2.জ্বর নিরাময়: নিমের শাক, পাতা ও ছাল জ্বরের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। নিমে থাকা বিশিষ্ট উষ্ণতা জ্বর নিরাময়ে মাদক কর্ম করে।

3.প্রতিবন্ধক বৈকল্পিক: নিমের বিষাক্ততা জনিত গুণ কারণে এটি অনেক প্রকার জীবাণু, কীটনাশক ও কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক বৈকল্পিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

4.দন্ত পরিস্কার: নিমের ডেন্টিফ্রাইফার গুন দাঁতের সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয় এবং এটা খুব কার্যকারি।

5.শক্তিসম্পন্নতা বৃদ্ধি: নিমের বিভিন্ন উপাদান মাংসপেশী সংক্রান্ত কাজের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি শরীরের শক্তিসম্পন্নতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

6.বৃণ পরিষ্কার ও শুষ্ক করণ: নিমের বৃণনাশক গুন ও জমানো ক্ষমতা বৃণ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ছোঁয়া ব্রণ, সামান্য ব্রণ, চার্ম পড়ার রোগ, একজন্যে ব্রণ, মচক্কা ব্রণ ইত্যাদির চিকিৎসা ও পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

7.গাথাপথ্য চিকিৎসা: নিমের ছাল ও ছত্রাকনাশক গুন মধ্যে থাকা কারণে এটি কিছু গাথাপথ্য রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ

ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ হলো ঔষধি সংক্রান্ত উদ্ভিদগুলির সংগ্রহ, চিত্রণ এবং সনাক্তকরণের পদ্ধতি। ঔষধি উদ্ভিদ গুলি বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি হতে পারে,

যেমন

  • পাতা,
  • ফুল,
  • শাখা,
  • বীজ,
  • রেজিন,
  • ছাল ইত্যাদি।

এই উদ্ভিদগুলি প্রাকৃতিক ঔষধি সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়, যাতে ঔষধি সম্পাদন এবং গবেষণা করা যায়।

ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ শুরু হয় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জীব ও জৈব বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করে। উদ্ভিদগুলি প্রাকৃতিক উদ্ভিদগুলি হতে পারে অথবা চাষ করে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ঔষধি উদ্ভিদগুলির সংগ্রহের জন্য প্রথমে যে স্থানগুলির জীববৈচিত্র্য উপযুক্ত হবে তাদের সনাক্তকরণ করা হয়। 

ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণের জন্য কিছু প্রধান ধাপ নিম্নলিখিত হতে পারে:

১. অভিযান পরিকল্পনা: ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণের জন্য প্রথমে একটি অভিযান পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করে সংগ্রহ করা উদ্ভিদের ধরন, উদ্ভিদ প্রজাতি, সংগ্রহের অঞ্চল ও সংগ্রহের উদ্দেশ্য ইত্যাদি।

২. উদ্ভিদ সংগ্রহ: পরিকল্পিত অঞ্চলে ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়। এটা সংগ্রহের জন্য যে উদ্ভিদ প্রজাতির প্রয়োজন তা সিদ্ধান্ত করা হয়। বিভিন্ন উদ্ভিদগুলি প্রয়োজনীয় অঞ্চলে থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং সংগ্রহের সময় উদ্ভিদগুলির ভাল অবস্থা বজায় রাখা হয়।

৩. পরীক্ষা ও শনাক্তকরণ: সংগৃহীত উদ্ভিদগুলির পরীক্ষা ও শনাক্তকরণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেন।

৪. উদ্ভিদ শনাক্তকরণ: সংগ্রহকৃত ঔষধি উদ্ভিদগুলির শনাক্তকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এটি অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরা করে থাকেন। উদ্ভিদগুলির শনাক্তকরণ মাধ্যমে তাদের বৈশিষ্ট্য, রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান, বিটার সম্পদ ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়।

৫. উদ্ভিদ পরিবেশ সংরক্ষণ: ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদগুলি সংগ্রহ করার সময় প্রাকৃতিক পরিবেশের বায়ু, মাটি, জল এবং পরিবেশের আরও উপাদান সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত।

আরো পড়ুন: ঔষধি উদ্ভিদ কাকে বলে

৬. উদ্ভিদ সংরক্ষণ: ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহের পরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

৭. উদ্ভিদ বিজ্ঞানী সংস্থা সংযোগ: উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী সংস্থা এবং গবেষণা সংস্থা সংযোগ স্থাপন করা হয়। এই সংস্থাগুলি উদ্ভিদগুলির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে।

৮. উদ্ভিদ নিবন্ধন ও তথ্য সংরক্ষণ: সংগৃহীত ঔষধি উদ্ভিদগুলির নিবন্ধন এবং তথ্য সংরক্ষণ পর্যালোচনা করা হয়। এই ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন উদ্ভিদের নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, সংগ্রহের তারিখ, উদ্ভিদের প্রতিষ্ঠানিক তথ্য ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।

৯. গবেষণা এবং উন্নয়ন: ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণের মাধ্যমে গবেষণা করে এবং উন্নয়ন করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button