
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমা হামলায়, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। এই হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রবিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হিব্রু ভাষায় না বলে সরাসরি ইংরেজিতে ভাষণ দেন নেতানিয়াহু। তাঁর বক্তৃতার লক্ষ্য ছিল মূলত মার্কিন প্রশাসন ও ট্রাম্প।
নেতানিয়াহু বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেছে।” ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে আসছে। তাই মার্কিন এই পদক্ষেপকে নেতানিয়াহু তাঁর দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবেই দেখছেন।
ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, কেবল সামরিক শক্তির মাধ্যমেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামানো সম্ভব। কিন্তু ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অতীতে ইসরায়েলের মূল্যায়নের সঙ্গে একমত হয়নি।
হামলার বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বোমার আগেই তারা পারমাণবিক উপকরণ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান থেকে চালানো এই হামলা তাদের একাধিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল হয়তো এই হামলাকে যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হিসেবে দেখছে। কারণ, দেশটি বহু আগে থেকেই ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুর তালিকা প্রস্তুত করে রেখেছে।
এদিকে ইরান থেকেও পাল্টা হুমকি আসতে শুরু করেছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যেকোনো মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে এবং তাতে তারা চরম মূল্য দেবে।”
ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী হুমকি দিয়েছে, লোহিত সাগরে চলাচলকারী মার্কিন জাহাজগুলো তাদের হামলার টার্গেট হবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনা, কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে এখন প্রশ্ন উঠছে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কি আরও বড় সংঘাতে রূপ নেবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্র এখানেই থেমে যাবে? মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আপাতত ইরানে সরকার পতনের কোনো পরিকল্পনা করছে না এবং সামরিক অভিযান শেষ বলেই মনে করছে।
তবে বাস্তবতা বলছে, যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে ইরান ও তার মিত্রদের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।