কারাগারে থেকেই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করলেন গায়ক নোবেল

আলোচিত কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর, সেই মামলার বাদী নারীকে কারাগারেই বিয়ে করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ও আদালতের নির্দেশে অনুষ্ঠিত এই বিয়ে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, বিয়ের সময় উভয় পক্ষের চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে নোবেল ও ওই নারীর ঘনিষ্ঠজনরাও ছিলেন। কারা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হয়।
আদালতের নির্দেশে কারাগারে বিয়ে
বিয়ের আগে নোবেল আদালতের কাছে আবেদন করেন, যাতে তিনি মামলার বাদীকে বিয়ে করতে পারেন। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ের অনুমতি দেন। মামলার বাদী নারী নিজেও আদালতে উপস্থিত থেকে সম্মতি জানান।
আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় বিয়ের আয়োজন করে। এতে কোনো রকম ব্যতিক্রম বা অনিয়ম হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
মামলার পেছনের ঘটনা
কণ্ঠশিল্পী নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয় ১৯ মে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার বাদী নারীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয় ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং সম্পর্ক গড়ায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে।
বাদীর অভিযোগ, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তাকে স্টুডিও দেখানোর কথা বলে রাজধানীর ডেমরার একটি বাসায় নিয়ে যান নোবেল। এরপর তিনি রাত আটটার দিকে বাসা ছাড়তে চাইলে তার মোবাইল ফোন নিয়ে ভেঙে ফেলেন নোবেল। পরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং সেই ভিডিও ধারণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর সাত মাস ধরে তাকে ওই বাসায় আটকে রাখা হয় এবং বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
পরে ওই নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে ভুক্তভোগীর পরিবারের নজরে আসে ঘটনা। তারা ঢাকায় এসে মেয়েকে উদ্ধার করে এবং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বিয়ের দাবি ও বিতর্ক
নোবেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মামলার বাদী আসলে তার স্ত্রী। তারা আগে থেকেই বিবাহিত, তবে বিয়ের কাবিননামা বা লিখিত প্রমাণ আদালতে জমা দিতে পারেননি নোবেলের আইনজীবীরা। তদন্তে উঠে এসেছে, মৌখিকভাবে বিয়ে হয়েছিল বলে জানা গেলেও সেটির কোনো লিখিত প্রমাণ নেই।
ডেমরা থানার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তারা বিয়ের কোনো দলিল বা প্রমাণ পাননি। এখন নতুন করে বিয়ে হওয়ায় সেটি রেকর্ডভুক্ত হয়েছে এবং মামলার প্রেক্ষাপটে এটি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
নোবেলের বিতর্কিত যাত্রা
গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলার ‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও, বিভিন্ন সময় সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য ও আচরণের কারণে তিনি সমালোচিত হন। এছাড়া ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও আচরণ নিয়েও তাকে ঘিরে নানা অভিযোগ উঠেছে।
একসময় চলচ্চিত্রে গান গেয়ে আলোচনায় আসার সম্ভাবনা থাকলেও, বারবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার কারণে সেই সম্ভাবনা ম্লান হয়ে যায়।
জনমনে প্রশ্ন
নোবেলকে ঘিরে সাম্প্রতিক এই ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। একজন ধর্ষণ মামলার আসামি কীভাবে বাদীকে কারাগারে বিয়ে করলেন, তা নিয়ে যেমন আলোচনা আছে, তেমনি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যায়বিচার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুযোগের ব্যবহারের বিষয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
কারাগারে থেকে ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করার ঘটনাটি বাংলাদেশে খুবই বিরল। এটি শুধু একজন তারকার ব্যক্তিজীবনের ঘটনা নয়, বরং ন্যায়বিচার, সামাজিক মূল্যবোধ ও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
নোবেল এখনো কারাগারে আছেন, মামলা চলমান। আইন ও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই জানা যাবে, এই বিয়ের ঘটনা ভবিষ্যতে মামলার মোড় ঘোরাবে কিনা।