ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ক্ষতি’, আইএইএ’র রিপোর্ট

ইরানের মধ্যভাগে অবস্থিত আরাক শহরের কাছে নির্মাণাধীন একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় স্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লির পানিশোধন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও আইএইএ (আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা) জানিয়েছে, এই পারমাণবিক চুল্লিটি এখনও চালু হয়নি এবং সেখানে কোনও পারমাণবিক পদার্থ রাখা হয়নি।
আক্রমণের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
ইসরায়েলের এই বিমান হামলা আরাকের খোনদাব পারমাণবিক স্থাপনায় করা হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা মূলত ‘নিষ্ক্রিয়’ পারমাণবিক চুল্লিটিকে লক্ষ্য করেছে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন। এছাড়াও, ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাও আবারো ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের উদ্বেগ হলো যে, আরাকের ভারী পানির রিয়্যাক্টরে প্লুটোনিয়াম উৎপাদিত হতে পারে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই ইসরায়েল এমনকি নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলোতেও নজর রাখছে এবং সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অবস্থা
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামলার ফলে এখন পর্যন্ত কোনো গুরুতর তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি বা বিপদ তৈরি হয়নি। তবে, এমন পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময় থেকেই যায়। তিনি বলেন, আইএইএর জন্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো থেকে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য কারিগরি তথ্য পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন এমন জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
আরাক পারমাণবিক স্থাপনার বৈশিষ্ট্য
আরাক পারমাণবিক স্থাপনাটি তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি একটি বিশেষ ধরণের ‘হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর’, যেখানে ঠান্ডা রাখার জন্য ভারী পানি ব্যবহার করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্য পারমাণবিক শক্তি সরবরাহ করা। তবে এই রিয়্যাক্টরে প্লুটোনিয়াম উৎপাদন হয়, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহারযোগ্য।
হামলার প্রভাব ও ভবিষ্যত পরিস্থিতি
ম্যাক্সার টেকনোলজির স্যাটেলাইট ছবি থেকে দেখা গেছে, ইসরায়েলের হামলায় আরাকের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। যদিও পারমাণবিক চুল্লি চালু হয়নি এবং কোনও পারমাণবিক পদার্থ ছিল না, তবুও এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ধরনের আক্রমণ ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জটিলতা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য পারমাণবিক নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে সীমিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এই স্থাপনাগুলো এখনও নির্মাণাধীন এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ বহন করছে না, তবুও নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই ঘটনা বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও ব্যবহারের সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কঠোর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হবে।