ইসরায়েল-ইরানের এবারের সংঘাত কীভাবে শুরু হলো এবং পরিস্থিতি এখন কোথায়

গত কয়েকদিন ধরেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সামরিক সংঘাত চলছে। দুই দেশের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় একে অপরের ওপর বিমান হামলা চালানোর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এই উত্তেজনার কারণে মৃত ও আহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুতর সংকেত বহন করছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে সম্প্রতি ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলায় স্থানীয় জরুরি সেবাদানকারী কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় এ পর্যন্ত ২২০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি পক্ষ দাবি করেছে তাদের দেশে এই সংঘাতে ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করা, যাতে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইরানকে থামানো না গেলে তারা খুব শীঘ্রই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে।”
তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি এই হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ইসরায়েলকে ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাল্টা হামলায় ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক কেন্দ্র ও বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এ সময় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আইরন ডোম’ বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।
সংঘাতের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন। তবে তিনি সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর বিরোধিতা করেছেন এবং ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংশয়। যদিও ইরান বলছে তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, কিন্তু অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বাস করে এটি সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাদের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা বিশ্বজনীন নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান কামনা করছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যেন শান্তি বজায় রাখতে পারে এবং যুদ্ধের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বশান্তির জন্য দ্রুত রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, যা সংঘাত বন্ধ করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।