বিশ্বআন্তর্জাতিক

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিণতি কী হতে পারে- বিশ্লেষকরা যা বলছেন

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক সামরিক অভিযানের কারণে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যা ইরানসহ আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

হামলার পর ট্রাম্প দাবি করেছেন, এটি ছিল একটি “সীমিত ও সফল সামরিক অভিযান” এবং যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে নয়। তবে ইরান বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কড়া ভাষায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘লাল সীমা’ অতিক্রম করেছে এবং এর পরিণতি ভালো হবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল সাময়িক উত্তেজনা নয়, বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হবে, শান্তিপ্রচেষ্টা দুর্বল হবে এবং ফিলিস্তিনি সংকটের কোনো সমাধানও আসবে না।

মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো এখন ঝুঁকিতে

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকে। পারস্য উপসাগরজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে, যারা ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার লক্ষ্য হতে পারে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, এর মিত্র দেশ ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

ইরান কি পাল্টা জবাব দেবে?

হামলার পর ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এখন কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। যদিও এখনও সরাসরি কোনো বড় প্রতিশোধমূলক হামলা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। ইরান যদি কঠোর জবাব দেয়, তাহলে পুরো অঞ্চলই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইরান কি পারমাণবিক পথে হাঁটছে?

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে ইরান কি এখন দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হবে? দীর্ঘদিন ধরে তারা দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ ইরানকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে এবং তারা হয়তো এখন আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নিতে পারে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

অনেকেই মনে করছেন, ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে যেমন সন্দেহজনক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করেছিল, এবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, ইরান নাকি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে কিন্তু তা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত করেননি। তবুও সেই অজুহাতেই ট্রাম্প এই পদক্ষেপ নেন।

বিশ্বের জন্য নতুন ঝুঁকি

বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে। এতে করে অন্যান্য দেশও নিজেদের প্রতিরক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকেই ঝুঁকতে পারে।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক নতুন এক সঙ্কটের মুখে। যুদ্ধ না চাইলেও বাস্তবতা বলছে, পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না আনলে, তা শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বকেই একটি নতুন অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button