আন্তর্জাতিক

ইরানে ইন্টারনেট সংযোগ ফেরানোর ঘোষণা আজ রাতেই

আন্তর্জাতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অনলাইন জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল ইরান, ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিকতায়

প্রায় তিনদিন বন্ধ থাকার পর ইরান ধাপে ধাপে ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় চালু করেছে। দেশটির সরকারি তথ্য মতে, শনিবার রাতে (স্থানীয় সময় রাত ৮টায়) আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হতে শুরু করে ইরান।

এই দীর্ঘ সময়জুড়ে ইরানের নাগরিকরা দেশের ভেতরে ও বাইরে যোগাযোগে চরম অসুবিধায় পড়েন। অনেকেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি, এমনকি জরুরি প্রয়োজনেও তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়নি।

কেন বন্ধ হলো ইন্টারনেট

ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘নেটব্লকস’-এর মতে, বুধবার থেকে ইরানে ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা শুরু হয়। দেশটির সরকার ইসরায়েলি সাইবার হামলার আশঙ্কা জানিয়ে প্রথমে গতি সীমিত করে, পরে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয় আন্তর্জাতিক অনলাইন দুনিয়া থেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই অবস্থায় যেকোনো ধরনের সাইবার হামলার ঝুঁকি মাথায় রেখে ইরান এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে সাধারণ মানুষ।

যেভাবে প্রভাব পড়েছে নাগরিক জীবনে

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও কলিং ও অনলাইন বার্তার অ্যাপগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বহু পরিবার, যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অনলাইন ব্যবসায়ীরা অর্ডার ও পেমেন্ট গ্রহণে সমস্যার মুখে পড়েন।

এমনকি হাসপাতাল ও জরুরি সেবাও কোনো কোনো জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানা গেছে।

তেহরানে বসবাসরত একজন বাসিন্দা জানান, গত তিন দিনে নিজের ছেলের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি। সে কানাডায় থাকে। খুব ভয়ের মধ্যে কেটেছে সময়টা।

কিছু এলাকায় এখনও সীমিত সংযোগ

নেটব্লকস জানিয়েছে, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু হলেও কিছু অঞ্চল এখনো আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক জায়গায় সংযোগ থাকলেও গতি অত্যন্ত ধীর, আবার কোথাও কোথাও একেবারেই কোনো সংযোগ নেই।

বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

ইরানের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতি সামনে আরও ঘন ঘন আসতে পারে, যেখানে কোনো দেশ নিজেদের নিরাপত্তার কারণে নিজেকে পুরোপুরি অনলাইন জগত থেকে আলাদা করে ফেলবে।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা ও প্রস্তুতি

বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরলেও, ইরান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি ভবিষ্যতে আবার এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। তবে এ ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, সাইবার হামলা এখন আধুনিক যুদ্ধের অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই অভিজ্ঞতা থেকে অন্য দেশগুলোকেও শিক্ষা নেওয়া উচিত যাতে একই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হুমকির মুখে না পড়ে এবং জরুরি সেবা চালু রাখা সম্ভব হয়।

৬২ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট চালু হলেও ইরান এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। চলমান আন্তর্জাতিক সংকট ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে দেশটি। এই অভিজ্ঞতা আবারও দেখিয়ে দিল, আধুনিক পৃথিবীতে ইন্টারনেট শুধু বিনোদন নয় এটি এখন জীবনের অপরিহার্য অংশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button