বিশ্বরাজনীতি

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: এক নজরে গত সাত দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সব ঘটনা

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাতের জেরে। গেল এক সপ্তাহে পাল্টাপাল্টি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই দেশের বহু সামরিক স্থাপনা ও বেসামরিক স্থাপনাসমূহ চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে শতাধিক মানুষের, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। যুদ্ধের ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

সংঘাতের সূচনা

১৩ জুন, শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল নাতাঞ্জ, তাবরিজ, ইস্পাহান, আরাক ও কেরমানশাহসহ অন্তত আটটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ জন সামরিক কমান্ডার নিহত হন।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান পরদিনই ইসরায়েল লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েল দাবি করে, তারা ১০০টিরও বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

দিন গড়াতেই বাড়ছে হামলার মাত্রা

পরবর্তী কয়েকদিন ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের বিভিন্ন সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় একাধিক দফায় হামলা চালায়। হাইফা, তেল আবিব, বাত ইয়ামসহ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে বিস্ফোরণ ঘটে, আহত হয় বহু মানুষ। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা হামলায় তেহরান, ইস্পাহান, মাশহাদসহ ইরানের অভ্যন্তরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।বিশেষ করে ১৭ জুন ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের গুরুত্বপূর্ণ শাখা ‘খাতাম আল-আনিবিয়া’র প্রধান আলী সাদমানিকে হত্যা করেছে।

রাজনৈতিক বার্তা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের একটি বিধ্বস্ত ভবন। মধ্য ইসরায়েল, ১৫ জুনছ
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের একটি বিধ্বস্ত ভবন। মধ্য ইসরায়েল, ১৫ জুনছ

উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েল সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে হুমকি দিয়েছে। জবাবে খামেনি সরাসরি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি এ সংঘাতে জড়ায়, তবে ফলাফল হবে ভয়াবহ।”

সংঘাতের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে আগেভাগে ফিরে গেছেন এবং এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ইরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।” ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে।

হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি 

সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানের পক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৬৩৯ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩২০ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানি হামলায় তাদের ২৪ জন নাগরিক নিহত ও প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইরানের কারাজ শহরে বিমানঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায়, আর ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় বেসামরিক মানুষও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সাইবার হামলা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ১৮ জুন থেকে ইরানে ইন্টারনেট সেবা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা নেটব্লকস জানায়, ইরানে প্রায় পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের যোগাযোগে বড় বাধা তৈরি করেছে।

বিশ্লেষণ বলছে, এই সংঘাত আর কেবল সীমিত আকারে নেই। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বিশ্বশক্তির ভূমিকা ও পারমাণবিক হুমকির সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে যার প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও শান্তিতে পড়তে পারে। এখন সকলের নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, কারণ ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা সরাসরি এই যুদ্ধে অংশ নেবে কি না।

সংঘাত চলমান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button