মতামতআন্তর্জাতিকবিশ্ব

আরব দেশগুলো সাহস দেখানোর এই সুযোগ আর পাবে? মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার মুখে ঐক্য ও কৌশলের ডাক

মধ্যপ্রাচ্য এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের ইতিহাস বদলে দিতে পারে। যুদ্ধ, রাজনীতি আর কূটনীতির এই ত্রিমুখী সংঘাতে ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে উত্তেজনা। একদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসী পদক্ষেপ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সরে আসার নীতি এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো। তাদের সামনে এখন বড় প্রশ্ন চুপ করে থাকবে, নাকি সাহস নিয়ে নেতৃত্বে আসবে?গত এক দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের নজর সরিয়ে নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। বারাক ওবামার সময় শুরু হওয়া “পিভট টু এশিয়া” নীতির ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প প্রশাসনও স্পষ্ট করে দিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্য আর তাদের প্রধান অগ্রাধিকার নয়। এতে কাতার, সৌদি আরব, ওমানের মতো দেশগুলো একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ পায় শুধু অর্থ নয়, বরং কৌশলগত নেতৃত্বের।

তারা সামনে এগিয়েও গিয়েছিল। ইরানের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ, আঞ্চলিক পরিকল্পনা, এমনকি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নতুন কাঠামো তৈরিরও প্রচেষ্টা চলছিল। কিন্তু এই চেষ্টার মাঝপথে ঘটে যায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনা হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বদলে ফেলেন তার আগের হিসেবি কৌশল। শুরু হয় আঞ্চলিক উত্তেজনার নতুন অধ্যায়।ইসরায়েলের বর্তমান কৌশল শুধু গাজা বা হিজবুল্লাহ নয়, সরাসরি ইরানকে লক্ষ্য করে। নেতানিয়াহু চান, ইরানের নেতৃত্ব হোক দুর্বল বা সরাসরি ভেঙে পড়ুক। আর এভাবেই নতুন করে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চলে। কারণ, ইরান যদি রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই বিশৃঙ্খলার ঢেউ প্রথমে আছড়ে পড়বে উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপরেই।

হিজবুল্লাহ, হুতি, অন্যান্য সশস্ত্র নেটওয়ার্ক এরা তখন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। সীমান্তে শুরু হবে অস্থিরতা, উদ্বাস্তু সংকট, আর পরোক্ষ যুদ্ধ। প্রশ্ন হলো, উপসাগরীয় দেশগুলো কি এসবের জন্য প্রস্তুত?অথচ তাদের হাতে এখনই আছে কৌশলগত প্রভাব। ১৯৭৩ সালে যেমন সৌদি আরব তেলকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিল, তেমনি আজ তাদের কাছে আছে জ্বালানি, অর্থনীতি, কূটনীতি সবকিছুই। তবু তারা এখনো ব্যবসাভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখতেই আগ্রহী। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য, রাশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা আলোচনা এসব করছে ঠিকই, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে কার্যকর কোনো কৌশল নিচ্ছে না।

ইসরায়েল যেখানে সামরিক শক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে, সেখানে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো এখনো দ্বিধায়। অথচ পরিস্থিতি বলছে, এখনই সাহসী কূটনৈতিক ভূমিকা নেওয়ার সময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button