আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে :-প্রতিটি মানুষ তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। প্রতিটি মানুষের কথা বলার আলাদা ধরন রয়েছে এবং সে ধরণ সমূহ অঞ্চলভিত্তিকভাবে গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের আলাদা ও নিজস্ব ভাষার প্রতি মর্যাদা দেয়া উচিত।
কেননা অঞ্চলভিত্তিকভাবে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলার ধরন এবং বাক্য উচ্চারণ এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে এজন্য আমরা আপনাদেরকে আঞ্চলিক ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানাচ্ছি।
কথা বলার ভিন্নতা ও প্রকারভেদ এর উপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক ভাষা একটি অন্যতম ভাষা হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ভাষার বিভিন্ন প্রকারভেদ বা অঞ্চল অনুযায়ী প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা বা অঞ্চল বেঁধে গড়ে ওঠা ভাষায় কথা বলে। এক্ষেত্রে মানুষের প্রতিটি এলাকায় আঞ্চলিকভাবে এ ভাষা গড়ে উঠে। এবং সে ভাষায় সকলে কথা বলে থাকে।
এজন্য প্রতিটি মানুষের আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব রয়েছে এবং সেগুলোর মর্যাদা দেয়া উচিত। পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব ভাষা ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলের যে নিজস্ব ভাষা রয়েছে তা জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আঞ্চলিক ভাষা কি
ভৌগলিকভাবে সমাজ গঠন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ধর্ম, পেশা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকায় আলাদা আলাদা ভাবে ভাষা রয়েছে।
মানুষ তাদের নিজস্ব অঞ্চল ভিত্তিক ভাবে সকলের যে সকল ভাষায় কথা বলে তা হলো তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা। একটি দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চল বিশেষ যে কথ্য ভাষায় সকলে কথা বলে তাকে আঞ্চলিক ভাষা বলা হয়।
প্রত্যেক দেশের মানুষের বিভিন্ন জেলাভিত্তিক বা অঞ্চল ভিত্তিক ভাবে ভাষার পার্থক্য থাকে। এছাড়াও ভাষার ক্ষেত্রে বাক্য উচ্চারণের ক্ষেত্রে ভাষার পার্থক্য উল্লেখযোগ্য।
যেমন :-
চলে → চইল্যা,,,
আমি →হামি,,,
আসছে →আইচ্চে,,
এগুলো কী? → ইগলা কী?,,,
আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে
একটি দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চল বিশেষ যে কথ্য ভাষায় সকলে কথা বলে তাকে আঞ্চলিক ভাষা বলা হয়। প্রত্যেক দেশের মানুষের বিভিন্ন জেলাভিত্তিক বা অঞ্চল ভিত্তিক ভাবে ভাষার পার্থক্য থাকে। এছাড়াও ভাষার ক্ষেত্রে বাক্য উচ্চারণের ক্ষেত্রে ভাষার পার্থক্য উল্লেখযোগ্য।
অঞ্চল বেধে মানুষ আলাদা আলাদাভাবে যে সকল নিজস্ব ভাষা ভিত্তিকভাবে কথা বলে সে সকল ভাষাকে অঞ্চলভিত্তিকভাবে আঞ্চলিক ভাষা বলা হয়।
যেমন :-
বোকা → অগদমা,,
মূল্যহীন → অপুচ্ছা,,
নাড়াচাড়া → আউল-জাউল,,,
বেহায়া →ঘ্যাচরা,,
শক্ত, মজবুত → পোক্ত,,,
আঞ্চলিক ভাষা উদাহরণ
অঞ্চল বেঁধে বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে।
- প্রমিত ভাষা থেকে সিলেটের ভাষার কয়েকটি উদাহরণ :-
আঙুল →অঙ্গুইল,,
ভালোবাসা →ভালাপাওয়া, পেরেম।
সমস্ত →হক্কল,,
জামাই →দামান,,
এটা কী? → ইগু/ ইটা কিতা?
- প্রমিত ভাষা থেকে নোয়াখাইল্লা ভাষার কয়েকটি উদাহরণ:-
ডিম →বয়জা,,
শয়তানি →খন্নাশি,,
পানি → হানি,,
সে আমাকে ফোন করেছিল → হেতে আঁরে হোন কইরছিলো,,
শুয়ে পড়ো → হুতি যা,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে ময়মনসিংহ ভাষার কয়েকটি উদাহরণ:-
ঢাকা →ডাহা,,
সঙ্গে/ সাথে →লগে,,
ঝাড়ু →হাছুন,,
টাকা → ট্যাহা/ টেহা,,
খাবো → খাইবাম,,
- প্রমিত ভাষা থেকে বরিশাইল্লা ভাষার উদাহরণ :-
হাঁটু → আঁডু,,,
শেওলা → হিদলা,,,
পায়ের গােড়ালী → গুরমুইর্যা,,,
থেমে যাওয়া → খ্যামা দেওয়া,,,
গাইওল → গাভী,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে খুলনা জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
দুষ্ট, চতুর → কল্লা,,
গায়ক →গাইন,,
অমাবস্যা → জোগা,,
লবণ → নেমক,,
জঙ্গল → বাদা,,
- প্রমিত ভাষা থেকে রাজশাহী জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
আমাদের → আমাগোর,,,
চলে → চইল্যা,,,
আমি →হামি,,,
আসছে →আইচ্চে,,
এগুলো কী? → ইগলা কী?,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে রংপুর জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
আমি → মুই,,
মেয়ে → চেংড়ি,,
পুরুষ→ ব্যাটাছাওয়া,,
আমাদেরকে →হামাকগুলাকে,,
→মরিচ →আকালী,,
- প্রমিত ভাষা থেকে কুমিল্লা জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
সে →হেতে ,,
হাইনজালা → সন্ধ্যা রাতে,,
করবো → করবাম,,
হেন → ভাতের মার,,
পাখি →পইখ,,
- প্রমিত ভাষা থেকে কক্সবাজার জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
সকাল → বিইন্না,,,
ঝগড়া →হইজ্জা,,,
নদী → দইজ্জা,,,
বিধবা →রারি,,,
সন্ধ্যা → আজঅইন্না,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে বগুড়া জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
ছেলে →ছোরা,,,
শরীর→ গাও,,,
সকলে →সোগলি,,
কেমন আছো? → ক্যাংকা আছু?,,
শাশুড়ি → শৌড়ি,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে সুনামগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
গুনে → গুনিয়া,,,
শশুর →হৌড়,,,
কনে →কইন্যা,,,
কাদা → ফেখ,,,
ঘুড়ি → গুড্ডি,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে টাঙ্গাইল জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
বোকা → অগদমা,,
মূল্যহীন → অপুচ্ছা,,
নাড়াচাড়া → আউল-জাউল,,,
বেহায়া →ঘ্যাচরা,,
শক্ত, মজবুত → পোক্ত,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে শরীয়তপুর জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণসমূহ :-
পাকের ঘর →পাহাল ঘর,,
এগিয়ে আসা →আউগ্গায়া,,,
তাড়াতাড়ি → কুদায়া,,,
বড়োসড় → ডাঙ্গর,,,
বালিশের কাছে → হিতান,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ সমূহ :-
রাত → আইত,,,
আমার → হামার,,,
বলবো →বলিম,,,
মারলো → মারিল্ল,,,
লুকিয়ে → নুকিয়া,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে বাগেরহাট জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ সমূহ :-
ধানের দালাল → কয়াল,,,
গন্ডার → গ্যাড়া,,
শিষ্য →চেলা,,
তেলাপোকা → তেলাচোরা,,
বাম-হাতি → ড্যাবরা,,,
- প্রমিত ভাষা থেকে সাতক্ষীরা জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ সমূহ :-
ওদের →উইগের,,,
যেতে, খেতে →জাতি, খাতি,,,
কালকে →কাউল্যা,,
করে →কোইর্যা,,,
মেরেছি →মারিচি,,,,
ইত্যাদি।
এছাড়াও কিছু আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ হল :-
→অকে,,,
→অমপুর,,,
→অক্ত,,,
→আঙা,,,
→আন্দন,,,
→উদিনকা,,,
→আইগন্যা,,,
→ক্যাংকা,,,
→ফ্যাদলা,,,
→এইংকা,,,
→উন্দাও,,,
→বাইগোন,,,
→বাহে,,,
→সুন্দরী,,,
→তাংকু,,,
→ দলান,,,
→ঢ্যানা,,,
→বাড়ুন,,,
→গাবরু,,,
→কাপাট,,,
→কইনা,,,
→এইকনা,,,
→ছাওয়া, ইত্যাদি ।
আরো পড়ুন: ভাষা কাকে বলে
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :-
১. আঞ্চলিক ভাষা হলো সাধারণ মানুষের মৌখিক ভাষা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর লিখিত রূপ ও পাওয়া যায়।
২. আঞ্চলিক ভাষা সাধারণত বিভিন্ন অঞ্চলের কথা বলার উচ্চারণ এবং বাক্য গঠন রীতির উপর নির্ভর করে।
৩. একটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে আঞ্চলিক ভাষা সম্পৃক্ত।
৪. আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো সাধু রীতিতে অথবা চলিত রীতিতে গৃহীত হয়।
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে আঞ্চলিক ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আশা করি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আঞ্চলিক ভাষা সম্পর্কিত যে সকল তথ্য জানতে চান অথবা জানতে চেয়েছেন তা যথাযথভাবে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।