আন্তর্জাতিক

আলোচনা চালাতে চান ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, ‘আগ্রাসন’ বন্ধ না হলে রাজি নয় ইরান

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন উদ্বেগ বাড়ছে, তখন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠক। বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষপররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মুখোমুখি হন। যদিও আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে ইউরোপীয় পক্ষ, ইরান স্পষ্ট করে বলেছে “আগ্রাসন বন্ধ না হলে তারা আলোচনায় বসবে না।”

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় প্রাণহানির পাশাপাশি বেড়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। এর মাঝেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যেই এই কূটনৈতিক বৈঠকের আয়োজন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:

 ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি

 ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট

 ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজা ক্যালাস

 জার্মানির উচ্চপদস্থ কূটনীতিকগণ

বৈঠকের আগে অংশগ্রহণকারীরা আলাদা করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন এবং ইরানের সাথে আলোচনার কৌশল নির্ধারণ করেন।

বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজা ক্যালাস বলেন,

 “আঞ্চলিক উত্তেজনা থেকে কেউই লাভবান হবে না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে দরকার নিয়মিত আলোচনা। তাই আমরা চাই দরজা খোলা থাকুক সংলাপের জন্য।”

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন,

 “এটা এক বিপজ্জনক সময়। আমরা ইরানকে স্পষ্ট জানিয়েছি, পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আলোচনায় ফিরে আসুক।”

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির বক্তব্য ছিল অনেকটা কঠোর সুরে। তিনি বলেন,

 “যারা আগ্রাসন চালিয়েছে, তাদের জবাবদিহি করতেই হবে। আগ্রাসন চলতে থাকলে আলোচনা অর্থহীন। শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই আমরা, তবে আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের বৈধ।”

তিনি আরও জানান, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ, এবং আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। কারও হুমকির মুখে ইরান মাথা নত করবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই বৈঠকের আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ভাষণ দেন আরাঘচি। সেখানেও তিনি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন। জেনেভায় পৌঁছে এরপরই তিনি অংশ নেন কূটনৈতিক আলোচনায়। এটিই ছিল চলমান সংঘাত শুরুর পর তাঁর প্রথম সরাসরি বৈঠক পশ্চিমা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারত, তবে ইরানের ‘শর্তসাপেক্ষে’ অবস্থান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। ইউরোপীয় নেতারা আলোচনার দরজা খোলা রাখতে আগ্রহী হলেও ইরানের কৌশল এখনো প্রতিরোধকেন্দ্রিক।

এদিকে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এই তিন দেশের নেতারা কূটনৈতিক সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আরও জোরালো করতে আহ্বান জানাবে বলে জানা গেছে।

এই বৈঠক হয়তো অবিলম্বে যুদ্ধ থামাতে পারবে না, কিন্তু একে বিশ্লেষকরা দেখছেন “শেষ চেষ্টা” হিসেবে। দুই পক্ষই এখন নিজেদের অবস্থানে অনড়। তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাস বলে, সংলাপ চলতে থাকলে সম্ভাবনার দরজা কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button