আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা; ইরান-ইসরাইল ইস্যুতে সমাধানের পথ খুঁজছে যুক্তরাজ্য ও মিত্ররা

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উত্তেজনা নতুন নয়। তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সম্প্রতি যে নতুন কূটনৈতিক আশার দ্বার খুলেছে, সেটি বিশ্ব পরিস্থিতিতে বড় একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, “আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে একটি কার্যকর কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।” এই ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে।

 পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কেন এত উদ্বেগ

ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, যেমন চিকিৎসা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কা এই কর্মসূচির আড়ালে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি (JCPOA) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। ইরান ধাপে ধাপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়েছে। এই প্রবণতা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেনেভা আলোচনার গুরুত্ব

২০ জুন শুক্রবার, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আলোচনায় অংশ নেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস।

এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো ইরানকে ফের আলোচনায় ফিরিয়ে আনা, এবং পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য কূটনৈতিক রূপরেখা তৈরি করা।

ডেভিড ল্যামি এই বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে। তিনি আগে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।

 ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বেগ

ল্যামি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে এখনও পরিস্থিতি অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “কূটনৈতিক পথই একমাত্র টেকসই সমাধান। আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

 বাংলাদেশের জন্য এই ইস্যুর গুরুত্ব কী

প্রশ্ন উঠতে পারে ইরান আর পশ্চিমা বিশ্বের এই কূটনৈতিক সংঘাতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী সম্পর্ক

সরাসরি কোনো ভূরাজনৈতিক অংশগ্রহণ না থাকলেও, ইরানের ওপর কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক উত্তেজনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

বিশেষ করে তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা, রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রভাব এবং বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা এসব বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ছাপ ফেলতে পারে।

কী হতে পারে পরবর্তী ধাপ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি জেনেভা বৈঠকে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়, তবে ইরান আবার পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বার্তা ছড়াবে।

অন্যদিকে, আলোচনায় ব্যর্থতা নতুন করে উত্তেজনা ডেকে আনতে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বিশ্ব রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইরান-পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। জেনেভা বৈঠক হয়তো কোনো চূড়ান্ত সমাধান আনবে না, কিন্তু এটি একটি বড় পদক্ষেপ সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথে।

বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই আলোচনার সফলতা কামনা করাই যুক্তিযুক্ত। এখন সবার দৃষ্টি জেনেভার দিকে, যেখানে আগামী কয়েক দিন বিশ্ব কূটনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button