দু–একটি দলের প্রস্তাবকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে: ঐকমত্য আলোচনায় প্রশ্ন তুললেন- নুরুল হক

রাজনীতিতে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের আলোচনায় অংশ নেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, চলমান আলোচনায় কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন নুরুল হক নুর।
গণ-অভ্যুত্থান কারও একার ছিল না’ বললেন নুর
নুর বলেন, এই দেশে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, সেটি কোনো একটি বা দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়নি। এটা ছিল একটি সম্মিলিত চেতনার ফসল। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই আজকের ঐকমত্য আলোচনা হওয়া উচিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন আলোচনায় সব দলের মতামত চাওয়া হচ্ছে, তখন কেন কিছু দলের প্রস্তাব বারবার গুরুত্ব পাচ্ছে? যদি আলোচনা একতরফা হয়, তবে এটা জনগণের প্রতিনিধিত্বের নামে প্রহসন হয়ে দাঁড়াবে, যোগ করেন নুর।
আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ দলগুলোর তদবিরে অংশগ্রহণ’ অভিযোগ
নুরুল হক নুর আরও বলেন, সরকারপন্থী বা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কিছু দল, যারা অতীতে শাসকদলের অংশ হিসেবে কাজ করেছে, তারা এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে তদবির করে ঐকমত্য আলোচনা টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে। আমরা আজকের বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলেছি এবং পরবর্তী বৈঠকে এর সমাধান চাই, বলেন তিনি।
তার মতে, এই ধরনের পক্ষপাতমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনার উদ্দেশ্যই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং এটি শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, বরং পুরো জাতির সঙ্গে অবিচার।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দু’টি প্রস্তাব
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার নিয়েও চলছে আলোচনা। এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি দল দুটি ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে:
১. ৫৭৬ জন ভোটারের প্রস্তাব – জাতীয় সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের মোট ৫০০ সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি ভোটার তালিকা গঠন করা। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
২. ইউনিয়ন পরিষদ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব – আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদকেও যুক্ত করা হোক। এতে ভোটার সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
নুরুল হক নুর জানান, দ্বিতীয় প্রস্তাব নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা চলছে। তবে অধিকাংশ দল প্রথম প্রস্তাবের দিকেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি নয়
আলোচনার প্রসঙ্গে নুর এক আবেগঘন মন্তব্য করেন‘ যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের রক্তের সাথে যেন আমরা বেইমানি না করি। এই আলোচনায় অংশ নেওয়া মানে কোনো দলের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নয়, বরং গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া।
অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান
নুরুল হক নুর মনে করেন, অতীতে বহু রাজনৈতিক আলোচনা ও উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত ও পক্ষপাতের কারণে। “জাতীয় ঐকমত্য বলতে যদি আমরা বুঝি দুই-একটি দলের প্রস্তাবকে বাস্তবায়ন করা, তবে সেটি হবে অতীতের পুনরাবৃত্তি, বলেন তিনি।
তিনি শেষ পর্যন্ত বলেন, আমরা চাই একটা গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণের স্বার্থ এবং অংশগ্রহণ সবার আগে গুরুত্ব পাবে। দল নয়, জনগণই হবে আলোচনার মূল চালিকাশক্তি।