ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি কম, জানুন এর পেছনের কারণ

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইরানের নজিরবিহীন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার পাল্টা জবাব দিতে মাঠে নেমেছে ইসরায়েল। যুদ্ধের শঙ্কায় কাঁপছে পুরো অঞ্চল। তবে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি কমাতে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে একাধিক জরুরি পদক্ষেপ।

বিশেষ করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর তৈরি ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড’ অ্যাপ এখন সাধারণ মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রায় ১৫-৩০ মিনিট আগেই ইসরায়েলি নাগরিকদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে তারা সময়মতো বোমা প্রতিরোধী কক্ষ বা বোম্ব শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারছেন।

আগাম সতর্কবার্তা বাঁচাচ্ছে জীবন

হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, ইরান থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল পৌঁছাতে সাধারণত ১০ মিনিটের মতো সময় নেয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি শুরু হওয়ার মুহূর্তেই ইসরায়েলি সেনারা বিষয়টি শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন। তখনই দ্রুত অ্যাপ ও মোবাইল সম্প্রচার ব্যবস্থার মাধ্যমে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে।

সতর্কবার্তা পাওয়ার প্রায় ৯০ সেকেন্ড পর সাইরেন বাজতে শুরু করে—এই সময়ের মধ্যেই সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির কারণে অনেকেই এখন হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণহানিও ঘটেছে

যদিও অধিকাংশ মানুষ আগাম সতর্কবার্তার মাধ্যমে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারছেন, তবুও প্রাণহানি পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। ইরানের চার দফা হামলায় প্রায় ২০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। মধ্য ইসরায়েলের তেল আবিব ও আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন।

হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা হামলার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না। তবে যাঁরা নিরাপদ কক্ষে ছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই অক্ষত রয়েছেন।

স্কুল-অফিস বন্ধ, সর্বোচ্চ সতর্কতা

পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামী এক সপ্তাহ ভার্চ্যুয়াল ক্লাস চালু থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবা ও অত্যাবশ্যক পণ্যের দোকান খোলা থাকবে।

পুরোনো ভবন ঝুঁকিতে, ভূগর্ভস্থ পার্কিং নয়

সামরিক বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, প্রতিরোধ-ক্ষমতা ছাড়া কোনো ভূগর্ভস্থ পার্কিং শেল্টার হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষত পুরোনো ভবনগুলোতে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। তবে যাঁরা ভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন, অনেকেই সুরক্ষিত রয়েছেন।

সেনা মোতায়েন ও রিজার্ভ বাহিনী তলব

ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড তাদের সব রিজার্ভ সদস্যকে তলব করেছে এবং দেশজুড়ে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সম্ভাব্য আরও হামলা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

কারিগরি ত্রুটিতে সতর্কতা ব্যর্থ, তদন্ত চলছে

শনিবার ভোরে ইরানের একটি ধাপের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে অনেক বাসিন্দার কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছায়নি। এতে রিশোন লেজিওন শহরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ত্রুটির কারণ চিহ্নিত করে এর সমাধান করা হয়েছে।

📰 বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তিনির্ভর আগাম সতর্কবার্তা ও নাগরিক প্রস্তুতি যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ব্যাপক প্রাণহানি ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে উত্তপ্ত এই পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ মোড় নিতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।