তেজস্ক্রিয়তা কি? তেজস্ক্রিয় প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমাদের ওয়েবসাইটে শিক্ষা রিলেটেড তথ্যভিত্তিক তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কিত উক্ত পোস্টে আপনাদেরকে স্বাগতম। আমাদের উক্ত পোস্টে পড়ার মাধ্যমে আপনারা —
👉তেজস্ক্রিয়তা কি,,,
👉তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ,,,
👉তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য,,,
👉তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার,,, ইতাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য বা বিভিন্ন মৌলসমূহ কে আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে এমনকি কৃত্রিম প্রযুক্তি কে আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা একটি অন্যতম বিষয়। তবে রসায়নে রাসায়নিক পর্যায় সারণির ১২৮টি মৌলের মধ্যে এমন কিছু মৌল রয়েছে যেগুলোর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর তুলনায় বেশি।
সেগুলোকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলা হয়। সাধারণত তেজস্ক্রিয়তা তেজস্ক্রিয় মৌলের সাথে সম্পর্কিত। এজন্য বিভিন্ন মৌলের তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এবং মানব জীবনে সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে শিখাতিদের যথাযথভাবে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তেজস্ক্রিয়তা কি
পর্যায় সারণির যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর বেশি থাকে, সেই সকল মৌলের ইলেক্ট্রনসমূহ পরমাণু কেন্দ্রে অবস্থিত থাকার ফলে নিউক্লিয়াসকে দ্রুতগতির নিউটন দ্বারা যদি আঘাত করা হয় তাহলে নিউক্লিয়াসটি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চ বেতন ক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন বিকিরণ নির্গত হয়। উক্ত ঘটনাটিকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়।
সাধারণত ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত হারে আলফা রশ্ম, বিটা রশ্মি এবং গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।
যে সকল ক্রিয়া রশ্মি নির্গত হয় সেই সকল মৌলসমূহকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলা হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় মৌলের সংখ্যা হল মোট ১৪ টি। এছাড়াও তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক হলেন ফরহাসি বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল। “””
তিনি তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন,, এজন্য তাকে তেজস্ক্রিয়তার জনক বলা হয়। সর্বপ্রথম ইউরেনিয়াম ধাতুর তেজস্ক্রিয়তা লক্ষ্য করে, বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল ১৯৮৬ সালে।
তিনি ইউরেনিয়াম ধাতুটি পরীক্ষা করার মাধ্যমে দেখতে পান যে উক্ত ধাতুন নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত হারে বিশেষ বেতন ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরণ নির্গত হচ্ছে।
এজন্য তার নাম অনুসারে এ রশ্মির নাম দেয়া হয়েছে বেকারেল রশ্মি। পরবর্তীতে মাদাম কুরি অর্থাৎ বিজ্ঞানী মাদাম কুরি এবং তার স্বামী বিয়ের কুড়ি ব্যাপকভাবে গবেষণা করার মাধ্যমে থোরিয়াম,, পোলেনিয়াম,, রেডিয়াম,,
এটিএম সহ অন্যান্য বাড়ি মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে বেকরেল নামক রোশির মতো এক ধরনের রশ্মি নির্গত হয় এমন দেখতে পান। যার বর্তমান নাম তেজস্ক্রিয় রশি নামে পরিচিত।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ
সাধারণত তেজস্ক্রিয় রশ্মির মৌলের উপর ভিত্তি করে এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো যথাক্রমে :
১. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌল,,,
২. সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল,,,,
১. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌল:-ইউরেনিয়াম,, থোরিয়াম,, অ্যাক্টিনিয়াম,, রেডিয়াম,, ফ্রান্সিয়াম,, রেডন,, পেলোনিয়াম ইত্যাদি।
২. সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল:-
যে সকল মৌলসমূহকে পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন নিউক্লিয় বিক্রিয়া করার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয় সেগুলো হলো সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল। সাধারণত এ সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৯২ এর থেকে বেশি থাকে। যেমন :- রঞ্জেনিয়াম,, পুটোনিয়াম,, নেপচুনিয়াম,, ইত্যাদি।
তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য
তেজস্ক্রিয়তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে তেজস্ক্রিয়তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :-
১. তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের বামন এর ফলে একটি মূল থেকে অন্যান্য অথবা নতুন মৌলের উৎপত্তি ঘটে।
২. তেজস্ক্রিয় তা হলো একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয় ঘটনা।
৩. চুম্বক ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ, তাপ, চাপ, এবং বাইরের যেকোনো বল দ্বারা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা তেজস্ক্রিয় তা প্রবাবিত হয় না।
৪. সাধারণভাবে যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর বেশি হয়ে থাকে সেগুলো হলো পরমাণুর তেজস্ক্রিয় ধর্ম প্রদর্শনকারী মৌল সমূহ।
৫. তেজস্ক্রিয়তা হলো সাধারণত একটি সবিরাম নয় বরং অবিরাম ঘটনা।
৬. সর্বোপরি তেজস্ক্রিয়তা হলো স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাকৃতিক একটি ঘটনা।
তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার
১. অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, কাগজ সহ অন্যান্য বিভিন্ন বস্তুর ঘনত্ব, পুরুত্ব এবং উপাদানের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বিটা রশ্মিকে এবং আলফা রশ্মিকে ব্যবহার করা হয়।
২. তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে সাধারণত ভীষণ প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপাদন করে সে তাপকে অর্থাৎ তাপ শক্তিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এবং টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়
৩. ঘড়ির কাঁটায় যে সকল তেজস্ক্রিয় থোরিয়াম এবং তার সাথে জিংক সালফেট এর প্রলেপ দেওয়া রয়েছে সেটি সাধারণত অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকে।
৪. খনিজ পদার্থের যে সকল ধাতু রয়েছে সেই সকল পদার্থের ধাতুর পরিমাণ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করা হয়।
৫. গবেষণা করার মাধ্যমে উন্নত বীজ তৈরি করার ক্ষেত্রে সফলভাবে তেজস্ক্রিয় থাকে ব্যবহার করা হয়।
৬. গামা বিকিরণে যে সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে সেগুলোকে জীবনমুক্ত করার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় তার ভূমিকা রয়েছে।
৭. আলফা কণাকে সাধারণত স্মোক ডিটেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৮. প্রাচীন কালের বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর বয়স নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে, পদ্ধতি ব্যবহার করে জীবাণুগুলোকে অর্থাৎ জীবাশ্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন শীলাকন্দ এবং নমুনার বয়স নির্ধারণ করা হয়।
৯. বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যাধিক হারে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ।
১০. বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং রয়েছে যেগুলো খোলা ছাড়া খাদ্য সামগ্রী গুলোকে জীবাণু মুক্ত করার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কোন একটি খাবারকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য এবং খাদ্য জনিত সংক্রমনের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার উল্লেখ যোগ্য।
আমাদের উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যেমন : তেজস্ক্রিয় রশ্মি, তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ, তেজস্ক্রিয় রশির ব্যবহার এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানিয়েছি।
আশা করি,, আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে যে সকল তথ্য বা প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তা যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।