শিক্ষা

যতি চিহ্ন কি? যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার

আমাদের ওয়েবসাইটের যতিচিহ্ন রিলেটেড উক্ত পোস্টে আপনাদেরকে স্বাগতম। উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে যতিচিহ্ন কি এবং যতি চিহ্ন ব্যবহারের বিভিন্ন প্রয়োগ উদাহরণসহ জানাচ্ছি। 

সাধারণভাবে আমরা যখন পাঠক হিসেবে কোন একটি বই পড়ি তখন বই পড়াকালীন সময়ে কোন গল্প বা কবিতা পড়ার সময় নির্দিষ্ট একটি সময় পর পর পড়ার মধ্যে থামতে হয়। 

তবে এই থামার ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় ঠিক কতটুকু পরিমান থামতে হবে তা আমাদের জানার জন্য যতি চিহ্নের প্রচলন করা হয়। 

যতি চিহ্ন প্রচলন বা জ্যোতিচিহ্নের প্রয়োগের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী চিহ্নের ব্যবহার এবং কোন কোন জায়গায় কোন কোন যতি চিহ্ন অনুযায়ী কত সময় থামতে হবে তা যথাযথভাবে জানতে পারে এবং তা পড়ার সময় কাজে লাগাতে পারে। 

যতি চিহ্ন কি

বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্যে কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বোঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যেসব চিহ্ন ব্যবহৃতহয় সেগুলোকে যতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্ন বলে।বিরাম চিহ্নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলেন,

 যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার

যতি বা ছেদো চিহ্ন বা বিরাম চিহ্নের ব্যবহার নিম্ন তুলে ধরা হলো :-

  • কমা (,)→ লিখতে গিয়ে বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সামান্য মাত্র বিরামের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত নিয়মিত যে চিহ্ন ব্যবহৃত হয় তার নাম কমা (,)। ‘এক’ উচ্চরণ করতে যতটুকু সময় লাগে কমা’র স্থানে ঠিক ততটুকু বিরাম নিতে হয়। অল্প বিরাম বোঝাতে কমার ব্যবহার:-

০১. বাক্যে একই পদের একাধিক শব্দ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে তাদের মধ্যবর্তী একটি বা একাধিক কমা (,) ব্যবহার করে এক জাতীয় পদকে আলাদা করা হয়। কমা বসে দুই বা ততোধিক পদ, পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশে। যেমন:

০২.বিশেষ্য পদ :- মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদ্দীন-তাঁরা বাংলা ভাষার প্রধান কবি।

  • বিশেষণ পদ :-ভদ্রতা, নম্রতা, সত্যবাদিতা, আন্তরিকতা, মমতা প্রভৃতি গুণের সমাবেশ জীবনকে মহিমান্বিত করে।
  • সর্বনাম পদ :-তুমি, আমি, সে অর্থাৎ আমরা তিনজন এক সঙ্গে যাব।
  • অব্যয় পদ:-না, না, না, তোমার কথা আমি মানি না।
  • ক্রিয়াপদ :-এলাম, খেলাম, দেখলাম, জয় করলাম।

২. এক জাতীয় একাধিক বাক্যবাক্যাংশ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে কমা প্রয়োগে তাদের পৃথক করতে হয়।

০৩. একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি থাকলে তাদের মধ্যে কমা বসে। 

০৪. একই পদের বারবার ব্যবহারে মাঝে কমা বসে। যেমন:- আমি বিদ্যালয়ে যাব, যাব, যাব।

০৫.একটি বিশেষ্যের স্পষ্টতর পরিচয়ের জন্যে তুল্যভাবে পাশাপাশি অন্য বিশেষ্য পদ স্থাপিত হলে সেই অন্য বিশেষ্য পদের পূর্বে ও পরে কমা বসে। যেমন: মওলানা ভাসানী, মজলুম জননেতা স্মরণীয় হয়ে আছেন।

০৬. সম্বোধনের পর কমা বসে। যেমন: ওহে মাঝি, আমায় একটু পার করে দাও।

৭. হ্যা, না, বস্তুত, প্রথম, দ্বিতীয় ইত্যাদি অব্যয়ের পরে কমা বসে। যেমন: হ্যাঁ, আমি তোমাকে ডেকেছি।না, খারাপ কিছু নয়।প্রথমত, বইটা পড়বে।দ্বিতীয়, বইটা সম্পর্কে কিছু লিখবে।

০৮. ঠিকানা লিখতে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন: শ্যামল, ৩৯/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০, গ্রাম: দিঘলদী, ডাকঘর: ফাউসা বাজার, উপজেলা: আড়াইহাজার, জেলা: নারায়ণগঞ্জ।

০৯.বাক্যে প্রক্ষিপ্ত পদগুচ্ছ থাকলে কমা বসে। যেমন: পাভেল, এদিক ওদিক তাকিয়ে, নিচু স্বরে কথাটা বলল। 

১০. নামের শেষে ডিগ্রি থাকলে কমা বসে। যেমন: ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এম.এ., পি-এইচ, ডি। ১১. উদ্ধৃতি চিহ্নের আগে কমা বসে। যেমন: আমি বললাম, “আমি পাস করেছি।”

১১. তারিখ লিখতে কমা বসে। যেমন: ১ লা বৈশাখ, ১৪০০ সাল।

১২. বড় রাশিতে হাজার, লাখ ইত্যাদি স্পষ্ট করে বোঝাবার জন্যে কমা বসে। যেমন: ১০,০৫,১৯,৪৩০।

১৩.  আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে একই রকম আলঙ্কারিক শব্দ ব্যবহার করলে প্রত্যেক পদের পর (শেষ পদ ছাড়া) কমা বসাতে হয়। যেমন:নামহীন, গোত্রহীন, গৃহহীন, দীপ্তিহীন, কুৎসিত বলে কাউকে ঘৃণা করতে নেই

  • সেমিকোলন (;)কমার চেয়ে বেশি বিরতি প্রয়োজন হলে সেমিকোলন বসে। সেমিকোলনের স্থানে বিরতি কাল ১ বলার দ্বিগুণ সময় অর্থাৎ কমারদ্বিগুণ।সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়:-

০১. দুটি বা তিনটি বাক্য সংযোজক অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: আগে পাঠ্য বই পড়; পরে গল্পউপন্যাস।

৩. যেসব বাক্যে ভাবসাদৃশ্য আছে তাদের মধ্যে সেমিকোলন বসে। যেমন: দিনটা ভাল নয়; মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে।

০৪. ছোট ছোট বিতর্কিত অংশ নির্দেশ করার জন্যে সেমিকোলন বসে। যেমন: মেয়েটি, যে প্রথম হয়েছে, একটি পুরষ্কার পেয়েছে;

০৫. একাধিক স্বাধীন বাক্যকে বা সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এমন একাধিক বাক্যকে এক বাক্যে লিখলে বাক্যের মাঝখানে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: আমি তোমার পথ চেয়ে বসে আছি; তুমি না এলে আমার সব আশা ডুবে যাবে অতল সমুদ্রে।

  • দাঁড়ি (।)বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি (।) বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। একটি বাক্য বক্তার পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করলে, সে বাক্যের শেষে দাঁড়ি বসে। দাঁড়ি একটি বাক্যের শেষ ও অন্য বাক্যের সূচনা নির্দেশ করে। দাঁড়িতে বিরতির সময় এক সেকেন্ড।যেমন:সে বই পড়ে। গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা দাঁড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ:-

০১. নির্দেশাত্মক ও অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের শেষে দাঁড়ি বসে। যেমন:খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে যাও। (নির্দেশাত্মক)যখন তখন খেলতে যেয়ে সময়ের অপচয় করো না। (অনুজ্ঞাসূচক)

০২. প্রসঙ্গের সংখ্যা ও ক্রম নির্দেশে সংখ্যার পরে দাঁড়ি বসে। যেমন:বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে-১. অস্ট্রেলিয়া, ২. ভারত, ৩. পাকিস্তান।

০৩. পরোক্ষ প্রশ্নের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন না বসে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন:রত্না জানতে চাইল রেখার সাথে আমার সম্পর্ক ভাল আছে কি না।

  • দুই দাঁড়ি (11)প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিতায় দুই দাঁড়ির প্রচলন ছিল। বিজোড় পঙক্তির শেষে এক দাঁড়ি ও জোড় পঙক্তির শেষে দুই দাঁড়ি ব্যবহারকরা হয়। যেমন:

মধ্যযুগ:কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস। সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।। তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন। নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।। আরবি ফারছি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।দেশি ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।।

০১. বর্তমানে কিছু কিছু গীতিকবিতা যেগুলো গান হিসেবে গাওয়া হয়, সেগুলোর কোনো কোনো চরণ দুবার লেখার পরিবর্তে দুই দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। যেমন: ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে ওমা, আমি নয়নজলে ভাসি।।

০২. পরিচিতি নির্দেশের সংক্ষেপণে দুই দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন: স্বদেশবার্তা-দ্বিতীয় বর্ষ-চতুর্থ সংখ্যা-প্রচ্ছদ আবদুর রোউফ সরকার।। 

০৩. নাটকের চরিত্রের নাম ও সংলাপের মাঝে দুই দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। যেমন:নেতা কে?হাফিজ।। সেই লাশটা।নেতা।। লাশ? কোন লাশটা?হাফিজ।। বুলেট খাওয়া। ছাত্র, খুলি নেই।

  • প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে, সন্দেহ বোঝাতে, ব্যঙ্গাত্মক মনোভাব বোঝাতে ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।

০২. বাক্যে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তুমি কখন এলে? সে কি চলে যাবে? 

০৩. সন্দেহ বোঝাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: সে কি আজ আসবে?

০৪. ব্যঙ্গাত্মক মনোভাব প্রকাশে বা কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্যও কখনো কখনো বাক্যের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন: তোমার মত উপকারী বন্ধু (?) না থাকাই ভাল। এমন বুদ্ধিমান (?) আর দেখি নি।

  • বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!):-হৃদয়াবেগ, সবিস্ময়, আবেদন, ভীতি, হতাশা আনন্দ ইত্যাদি প্রকাশের ক্ষেত্রে বিস্ময়বোধক ও সম্বোধন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।

০২. আবেদন, ভীতি, হতাশা, আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসে। যেমন: দয়া করে আমার কথা শুনুন!

 ০৩. সবিস্ময় প্রশ্নের জায়গায় প্রশ্ন চিহ্নের পরিবর্তে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসে। যেমন:তোমার হৃদয় কী পাষাণে গড়া!একটি বারও আমার কথা ভাবলে না!

০৪. সংক্ষিপ্ত উত্তরের শেষে কখনো কখনো পূর্ণচ্ছেদ না বসে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসে। যেমন: আমাকে একটু আদর করবে!

যতি চিহ্ন কি
যতি চিহ্ন কি
  • কোলন (:)

০১. একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে আর একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ব্যবহৃত হয়। মনে রাখতে হবে, কোলন কখনো বিসর্গের (ঃ) মতো হবেনা। কোলনের মাঝে ফাঁকা থাকে না। 

২. কোনো বিবৃতিকে সম্পূর্ণ করতে দৃষ্টান্ত দিতে হলে কোলন ব্যবহার করতে হয়। যেমন:- সমাস ছয় প্রকার: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি,অব্যয়ীভাব, কর্মধারয়, দ্বিগু।

০৩. নাটকের চরিত্রের পরে ও সংলাপের আগে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন:ফরিদ: আব্বা, আমি যাই।আব্বা: কোথায়?ফরিদ: ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসি।আব্বা: না না। তুই যেতে পারবি না।

৪. আবেদনপত্রে ভুক্তি, উপভুক্তির পরে কোলন বসে। যেমন: নাম: পিতার নাম: ঠিকানা: শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্বাক্ষর: তারিখ। 

৫. উদাহরণ, তালিকা, ব্যাখ্যা, বিশদ মন্তব্যের আগে কোলন বসে। 

৬. ধারাবাহিক উপস্থাপনায় কোলন বসে। তালিকায় প্রথম থেকে: বাতেন, রোকন, বাদল, পারভেজ, সুমন।

৭. সময়কে সংখ্যায় নির্দেশ করার ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন:- ৮: ১৫; ১২:১০; ১:২০।

  • ড্যাশ চিহ্ন (−)ড্যাশ ও হাইফেন দেখতে অনেকটা একই রকম। এদের পার্থক্য হচ্ছে ড্যাশ হাইফেনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত লম্বা ।

০২. উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাশ উভয়ই ব্যবহৃত হয়। যেমন: ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার—অতীত কাল, বর্তমান কাল ও ভবিষ্যৎ কাল।

০৩. কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে,।

০৪. বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে সেই বাক্যের শেষে ড্যাশ ব্যবহৃত হয়। যেমন: বাবা গর্জন করে উঠলেন, “বটে রে-” উদ্ধৃতি চিহ্নের পরিবর্তে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: শিক্ষক বললেন–এই ছেলে, এদিকে আয়।

৫. উদ্ধৃতি চিহ্নের পরিবর্তে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: শিক্ষক বলেলেন—এই ছেলে, এদিকে আয়।

০৬. গল্পে, উপন্যাসে বা কবিতায় প্রসঙ্গের পরিবর্তন বা ব্যাখ্যায় ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: অ্য–এ হল কী?কলি কি সত্যি উল্টাতে বসল?

০৭. স্বরকে প্রলম্বিত দেখানোর জন্যে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:ঘু—ম-আ—সে–না ; দু—চো—খে—আ-মা-র।

০৮. শব্দের অর্থ লিখতে বা সমার্থক শব্দ লিখতে বা বিপরীত শব্দ লিখতে দুটি শব্দের মাঝখানে ড্যাশ বসে। যেমন:অর্থ: চন্দ্ৰ—চাঁদ ; হস্ত—হাতসংস্কার–পরিমার্জন ; অগাধ—প্রচুরবিপরীত শব্দ: সুন্দর-অসুন্দরধর্ম—অধর্ম ; লাভ-ক্ষতি ; উত্তম—অধম

০৯. বাক্যের মধ্যে ব্যাকরণ সম্পর্কহীন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ সংযুক্ত করার জন্যে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: সত্যি আমি দীর্ঘকাল তোমার অপেক্ষায় ছিলাম—আজও অপেক্ষায় আছি।

  • হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-):-হাইফেন ইংরেজি থেকে এসেছে। কিন্তু এর ব্যবহার ইংরেজির চেয়ে বাংলায় অনেক বেশি।

১. সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার জন্যে হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: এ আমাদের শ্রদ্ধা-অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি-উপহার।

২. লেখায় এক পঙক্তির শেষে একটি সম্পূর্ণ শব্দ বসানোর জায়গা না থাকলে শব্দের অর্ধাংশ লিখে হাইফেন দিয়ে পরবর্তী পরবর্তী পঙক্তিতে লেখা হয়। যেমন:শ্যামলী ধরেছে আড়ি; যা-বেনা আমাদের বাড়ি; গ-লি পথে চলে যায়।

৩. যেসব ক্ষেত্রে সব কটি শব্দই সমান দরকারি এবং স্বাধীন, কোনোটির ওপর নির্ভরশীল নয়, সেসব স্থানে হাইফেন বসে। যেমন: সোনা-রূপা চাই না আমিহিরা-চুনি-পান্নায় আমার কোনো প্রয়োজন নেইআমি শুধু তোমাকেই চাই।

০৪. দুই বা ততোধিক শব্দ মিলিয়ে শব্দ তৈরি করা হলে শব্দগুলোর মধ্যে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: আমার মাদুলি-কবতো মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে কবরে গিয়াছিল। সদ্য-চুলে পাক-ধরা-মাথাটা আয়নার ভিতরে দেখতে পেলেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়।

  • লোপ চিহ্ন (‘)কোনো বর্ণ বিশেষের লোপ বোঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্যে (‘) লোপ চিহ্ন দেওয়া হয়। এর অপর নাম ইলেক। যেমন:মাথার ‘পরে জ্বলছে রবি (’পরে = ওপরে পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা? (কা’রা= কাহারএমন কিছু জায়গা আছে যেখানে ইলেক বা লোপ চিহ্ন ব্যবহার না করলে বাক্য ঠিক থাকবে না।

সেখানে অবশ্যই ইলেক চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।সালের বর্জিত সংখ্যা বোঝাতে ইলেক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ২১ ফেব্রুয়ারি ’৫২; ২৬ মার্চ ‘৭১; ১০ জানুয়ারি ’০৮।

  • উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”):-

১. বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে উদ্ধরণ চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যেমন: শিক্ষক বললেন, “আগামীকাল তোমাদের ইংরেজি পরীক্ষা নেব।”

২. অন্যের লেখা অবিকল উদ্ধৃতি বা উক্তির ক্ষেত্রে উদ্ধৃতি বা উক্তির শুরুতে ও শেষে উদ্ধৃতি চিহ্ন দিতে হয়। যেমন: সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী বলিল, “ঠাকুর, একটু সাবধানে খুঁড়ো। সাপ একটা নয় একজোড়া তো আছে বটেই হয়তো বা বেশি থাকতে পারে।”

৩. উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে ভিতরের অংশের শুরুতে ও শেষে একটি উদ্ধৃতি চিহ্ন দিতে হয়। যেমন:-~ বলে তারা, “হে পথিক! বল বল তব প্রাণ কোন্ ধন মাগে? 

৪. কোনো বিশেষ শব্দ বা শব্দগুচ্ছ এবং গ্রন্থের নামে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ‘পঙ্কজ’ শব্দের অর্থ ‘পদ্ম’।

৫. কখনো কখনো একটি উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:বনের পাখি বলে, ‘না,আমি শিখানো গান নাহি গাই । ’খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,আমি কেমনে বনের গান গাই ।

  • বন্ধনী চিহ্ন ( ),, { },, [ ]সাহিত্যে সাধারণত প্রথম ( ) ও তৃতীয় [ ] বন্ধনী চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় {} বন্ধনী চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায় না। প্রথম বন্ধনী ( )

১. সম্পর্কশূন্য পদ বা পদগুচ্ছ বাক্যে যুক্ত করতে প্রথম বন্ধনী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন: নাও (বইটা হাতে দিয়ে) পড়।

২. ব্যাখ্যা করে বোঝাবার জন্যে প্রথম বন্ধনী চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: (বিরক্ত সুরে) কী সব আবোল তাবোল বলতে শুরু করেছে।

(প্রস্থান)

০৩. নাটকে সংলাপের সঙ্গে নির্দেশের জন্যে প্রথম বন্ধনী চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: সেনাপতি: অচিরেই তার দর্পচূর্ণ করব। (পদাঘাত) রাজা: সেনাপতি! আর বিলম্ব নয় (খাপ থেকে তলোয়ার টেনে), আজই আমি প্রতিশোধ চাই! (প্রস্থান)

উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে তিচিহ্ন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এবং জানার জন্য বিভিন্ন প্রকার ও যতি চিহ্নের ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানিয়েছি। 

আশা করি আমাদের পোস্টে পড়ার মাধ্যমে যতি  চিহ্ন সম্পর্কিত যে সকল তথ্য জানতে চান অথবা জানতে চেয়েছেন তা যথাযথভাবে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button