রাজনীতি নিয়ে আর কিছু লিখবেন না ফারিয়া, কারণ যা দেখলেন –

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া এক সময় ছিলেন নাটক ও চলচ্চিত্রের নিয়মিত মুখ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে অভিনয়ে কম দেখা যাচ্ছে। এখন তিনি এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অভিনয়ের ব্যস্ততা কমলেও, সামাজিক বিষয় ও জাতীয় ঘটনাবলিতে তার সক্রিয় অবস্থান বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন ও সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদে তার স্পষ্ট অবস্থান চোখে পড়েছে বহুবার।
তবে এবার সেই সরব কণ্ঠটাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।
গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে ফারিয়া জানালেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আর কিছু লিখবেন না। কারণ, এই দেশ এবং জাতির বর্তমান অবস্থা তাকে গভীরভাবে হতাশ করেছে।
এটাই আমার শেষ পোস্ট’ হতাশার সুরে ফারিয়া
ফেসবুক পোস্টে শবনম ফারিয়া লেখেন, এই স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া বন্ধ করলাম। কারণ, ফাইনালি আমি বুঝে গেছি, জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ। আমরা কখনোই ভালো হবো না।
এই বক্তব্যে তার হতাশা আর ক্ষোভ স্পষ্ট। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও, বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ফারিয়াকে একটি ভিডিও বার্তা দিতে চাপ দেওয়া হয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি লিখেছেন, যখন আন্দোলন তুঙ্গে, ইন্টারনেট চলে যাওয়ার পর, কিছু সেলিব্রিটিকে ভিডিও বানাতে বলা হয়। আমাকেও বলা হয়েছিল। আমি প্রথমে সময় চাই। পরে সিয়ামকে জিজ্ঞেস করি সে জানায়, ‘আমি না করেছি।’ তখন আমিও সাহস পাই এবং না বলি।
এই অংশে স্পষ্ট যে, ফারিয়া শুরুতে ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু পরে সাহসিকতা দেখিয়ে নিজের অবস্থান নেন। তিনি বলেন, সে সময় এটাই করার কথা ছিল। আমি না বলেছি, বলে কোনো বিশেষ ক্রেডিট নিতে চাই না।
‘ডলার খাইছে’ মন্তব্যে বিরক্তি
অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে সেলিব্রিটিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা আন্দোলনের সময় নাকি ‘ডলার খেয়েছে’। এ প্রসঙ্গে ফারিয়া রাগ ও হতাশা প্রকাশ করে লেখেন, যখন দেখি কেউ বলে, ‘এরা তো ডলার খাইছে’ মার্কা কল্পনিক গল্প, তখন হাসা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
এই অংশে বোঝা যায়, একজন অভিনেত্রী হিসেবে নয়, বরং একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশ ও জাতি নিয়ে তার একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেটাই আজ ভেঙে গেছে।
‘আমি আর কিছু আশা করি না’ নিজের দেশ নিয়ে নিরাশা
ফারিয়া তাঁর লেখায় লেখেন, আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি, যারা আওয়ামী লীগকে মন থেকে ভালোবাসে, তবুও জুলাই আন্দোলনে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কারণ, মানুষ হয়ে কেউ যদি আরেকজন মানুষ হত্যার প্রতিবাদ না করে, তাহলে সে কেমন মানুষ!
সবশেষে তিনি লেখেন, আমি আমার দেশ নিয়ে আর কোনো প্রত্যাশা রাখি না। যত আন্দোলন হোক, সরকার পরিবর্তন হোক, আমরা ভালো হব না। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ ক্ষমতা পেলে সবাই সেটা অপব্যবহার করবে।
এই কথাগুলো একজন নাগরিকের ভেতরের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। একজন শিল্পী, যিনি দেশকে ভালোবেসেছেন, সেই মানুষটি আজ দেশের জন্য কোনো আশাই রাখতে পারছেন না এটা নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন।
শবনম ফারিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাস শুধু একটি ব্যক্তিগত হতাশা নয়, বরং এটা দেশের বহু মানুষের মনের কথা। যারা প্রত্যাশা করেছিলেন, পরিবর্তন আসবে সত্যিকার অর্থে মানুষ জাগবে তাদের অনেকেই আজ চুপসে গেছেন।
এই স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে একজন শিল্পীর কণ্ঠ হয়তো স্তব্ধ হলো, কিন্তু সেই কণ্ঠে ছিল সততা, ব্যথা, আর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের ছাপ। এমন কণ্ঠগুলো যত চুপ হয়ে যাবে, আমাদের ভবিষ্যৎ তত অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।