
ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে ঘটেছে অন্তত ৭টি হত্যাকাণ্ড। ঈদের পরদিন থেকে শুরু হয়ে একের পর এক ঘটেছে এসব মর্মান্তিক ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, খুনগুলো কোনোভাবেই পরিকল্পিত নয়, বরং আচমকা রাগ, সম্পর্কের জটিলতা ও ছোটখাটো বিরোধ থেকেই ঘটেছে। স্থানীয়দের ভাষায়, ‘মাথা গরম হলেই খুন করে ফেলছে’, যা এখন এক ভয়ংকর সামাজিক প্রবণতায় রূপ নিচ্ছে।
প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বে স্কুলছাত্রকে হত্যা: ফুলপুরে নবম শ্রেণির ছাত্র আবু রায়হান নিখোঁজ ছিল ১৩ জুন থেকে। চার দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার হয় একটি বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে। পরিবারের দাবি, প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার, সেই কারণেই খুন হতে হয় রায়হানকে। ঘটনার পরপরই মেয়েটির পরিবার পালিয়ে যায়, যা পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
ইটভাটায় যুবকের মরদেহ: ত্রিশালে ২৩ বছর বয়সী হাফিজুর রহমানকে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হত্যা করা হয়। পরদিন একটি ইটভাটায় পাওয়া যায় তার রক্তাক্ত মরদেহ। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। হত্যার কারণ এখনও অজানা।
পূর্ববিরোধে কলেজছাত্র খুন: গফরগাঁওয়ে কলেজছাত্র নাঈম মিয়াকে দাওয়া দাইর মাদ্রাসা মাঠে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল, যার মধ্যে একজন বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাও রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই এ হত্যাকাণ্ড।
১০ টাকা নিয়ে প্রাণ গেল ছাত্রদল নেতার: গৌরীপুরে চায়ের দোকানে মাত্র ১০ টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। ঝগড়া গড়ায় ছুরিকাঘাতে, যা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তদন্ত চলছে।
দাদির ওপর নাতির লাঠির ঘা: মুক্তাগাছায় মানসিকভাবে অসুস্থ এক তরুণ ফেরদৌস তার দাদিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পারিবারিক সূত্র জানায়, ফেরদৌস দীর্ঘদিন মানসিক রোগে ভুগছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় মামলা রুজু করেছে।
মাত্র ৫০০ টাকার জন্য স্ত্রীকে হত্যা: ভালুকায় সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন মিয়া। পুলিশ জানায়, মাত্র ৫০০ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্বপন তাকে কুপিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করেন। আদালতে স্বপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
নিখোঁজ বৃদ্ধার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার: মাসকান্দা এলাকায় ঈদের দিন থেকে নিখোঁজ থাকা জোবেদা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বয়স ছিল ৭০ বছর। এখনও হত্যার মোটিভ বের করা সম্ভব হয়নি।ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “এসব হত্যাকাণ্ড তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘটেছে। এগুলো ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত খুন নয়, হঠাৎ রাগে বা উত্তেজনায় এমন ঘটনা ঘটছে।” তিনি আরও জানান, এসব অপরাধ ঠেকাতে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু রয়েছে, তবে জনগণের সচেতনতাও জরুরি।