ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত, ব্ল্যাক বক্সের সূত্র ধরে কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে কর্তৃপক্ষ

শিরোনাম:
আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৬৫ জনের প্রাণহানি, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যাত্রী
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরে একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২৬৫ জন নিহত হয়েছেন। লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের কয়েক মুহূর্ত পরই মাটিতে আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার সময় বিমানটি মাটি থেকে মাত্র ১০০ মিটার ওপরে ছিল। হঠাৎই ‘মে ডে’ সংকেত পাঠানোর পরপরই এটি শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ভবনের ওপর আঘাত হানে। ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে বিমানযাত্রী, ক্রু সদস্য এবং নিচে থাকা সাধারণ মানুষও।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, বিমানে মোট ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে ২৬৫ জনের মরদেহ, যার মধ্যে অন্তত ২৪ জন ছিলেন ভূপৃষ্ঠে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ বহু দেহাংশ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিমানের ব্ল্যাক বক্স, যা থেকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হবে।
অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন রমেশ
বিমানে থাকা যাত্রীদের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান বিশ্বাষ কুমার রমেশ নামের এক ব্রিটিশ নাগরিক। বর্তমানে তিনি আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “আমি ভেবেছিলাম আমি মারা গেছি। পরে চোখ খুলে দেখি, আমি জীবিত।”
তিনি আরও বলেন, “বিমানের সবুজ আর সাদা আলো হঠাৎ জ্বলে উঠল। এক মিনিটের মধ্যেই ভয়াবহ কম্পন শুরু হয়। এরপর মনে হলো কিছু একটা আটকে গেছে, তারপরই বড়সড় ধাক্কা।”
ক্যান্টিনে দুপুরের খাবারের সময় প্রাণ গেল অনেকের
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটির সামনের অংশ একটি ছাত্রাবাসের ক্যান্টিন ভবনের ওপর পড়ে, যেখানে শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে প্রায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বেশিরভাগ দেহ। উদ্ধারকর্মীরা জানান, দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকা মৃতদেহে ভরে যায়।
স্বজনদের আহাজারি
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমে স্থানীয় হাসপাতাল ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে। স্বজনদের খোঁজে ব্যাকুল হয়ে পড়েন অনেকেই। আহমেদাবাদ শহরের জরুরি সেবা কেন্দ্রে একাধিক মানুষ ভিড় করে, যাদের প্রিয়জন ছিল বিমানে।
একজন নারী বলেন, “আমার জামাই মারা গেছে। আমার মেয়ে জানেই না সে আর নেই। আমি জানাতে পারব না, কেউ কি ওকে জানাবে?”
সরকার ও এয়ার ইন্ডিয়ার উদ্যোগ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিমান সংস্থার মালিকানা প্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, সব মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে প্রবাসে থাকা আত্মীয়দের কাছ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু
এই দুর্ঘটনার তদন্তে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল আহমেদাবাদে পৌঁছেছে। এটি বোয়িং ৭৮৭ সিরিজের প্রথম বড় ধরনের দুর্ঘটনা বলে জানা গেছে।
অতীতের করুণ স্মৃতি
ভারতে এ ধরনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার নজির আগেও আছে। ২০১০ সালে ম্যাঙ্গালোরে একটি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৮ জন নিহত হন। তারও আগে ১৯৯৬ সালে নয়াদিল্লির আকাশে দুটি বিমানের সংঘর্ষে মারা যান প্রায় ৩৫০ জন।
বিমান চলাচলের বিপুল চাহিদা, প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়ে
সম্প্রতি ভারতের বিমান শিল্প দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যাত্রী চাহিদা বাড়লেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনার পেছনে ইঞ্জিন বিকল বা পাখির সঙ্গে ধাক্কাও সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
এই দুর্ঘটনা শুধু ভারতের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক চরম সতর্কতা। উন্নয়ন ও আধুনিকতার সঙ্গে সমান্তরালে এগিয়ে যেতে হলে নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার দিতে হবে।