খেলাবিশ্ব

ফুটবলের নতুন জোয়ার কি কাজে লাগাতে পারবে বাফুফে? প্রবাসীদের ভরসায় জাগছে স্বপ্ন

প্রবাসীদের ছোঁয়ায় ফুটবলে জেগে উঠছে বাংলাদেশ, কিন্তু প্রস্তুতি কতটুকু?

বাংলাদেশ ফুটবলে যেন নতুন এক হাওয়া লেগেছে। দেশের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে আবারও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি ফুটবলার। কানাডা থেকে আসা শমিত সোম, ইতালির চতুর্থ বিভাগের খেলোয়াড় ফাহামিদুল ইসলাম কিংবা জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজীর মতো ইউরোপে বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়রা যেন নতুন রঙে রাঙিয়ে তুলছেন জাতীয় দলকে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচেও তাঁদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে।

এই নবীন-প্রবীণ মিশ্রণে গড়া দলের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেকটা হঠাৎ জেগে ওঠা ঘুমন্ত ভালোবাসার মতো। বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য না থাকলেও দেশের মানুষের ফুটবলপ্রেম কোনোদিন মরে যায়নি। বিশ্বকাপ এলে সেটা আরও স্পষ্ট হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায় শহর থেকে গ্রাম। অথচ নিজের দেশের খেলায় সে উত্তেজনা দেখা যেত না বহুদিন।

প্রবাসীদের এই অন্তর্ভুক্তি যেন সেই শূন্যতায় একটু আলো এনে দিয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় এই আলো কতটা স্থায়ী?

অনেকেই বলছেন, শুধু কয়েকজন বিদেশপ্রবাসী খেলোয়াড় দিয়ে দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে না। ফেডারেশন যদি এই সুযোগ কাজে না লাগায়, তাহলে এই জাগরণটিও অতীতের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। কারণ, শুধু জাতীয় দল নয়, গোটা দেশের ফুটবল কাঠামোই যে ভঙ্গুর।

জেলার লিগগুলো অনিয়মিত, শীর্ষ লীগও নামেই পেশাদার। অধিকাংশ ক্লাবের নেই নিজস্ব মাঠ, প্রশিক্ষণ সুবিধা, এমনকি বয়সভিত্তিক দলও নেই। এই বাস্তবতায় সবার আগে দরকার গোড়া শক্ত করা। ফুটবল একাডেমি, নিয়মিত ঘরোয়া লিগ, তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিভা অন্বেষণ এসব ছাড়া উন্নতির স্বপ্ন শুধুই কাগজে-কলমে থাকবে।

এই প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণও আসছে আলোচনায়। ওরাও প্রবাসীদের দিয়ে জাতীয় দল সাজাচ্ছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিচু স্তরেও করছে বিশাল বিনিয়োগ। ডাচ-ঘরানার ফুটবলারদের নিয়ে এসেছে শুধু নয়, নিয়েছে ডাচ কিংবদন্তি প্যাট্রিক ক্লাইভার্টকে কোচ হিসেবে। ফলে মাঠে ইন্দোনেশিয়া অনেক সময় ডাচ দলের মতোই লাগছে। এখানেই তাদের পরিকল্পনার পরিপক্বতা স্পষ্ট হয়।

বাংলাদেশও চাইলে পারত। দেশের ক্লাব ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া সেই স্বর্ণযুগ যেখানে আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথ ছিল শহরের উৎসব সেটা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। কারণ, ফুটবলের প্রাণ হলো ক্লাব। সেখানেই তৈরি হয় খেলোয়াড়, তৈরি হয় দর্শক-ভক্ত।

এই মুহূর্তে ফুটবলে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা হয়তো একটা সুযোগ, একটা সম্ভাবনার জানালা। তবে সেটা কতটা কাজে লাগানো যায়, তা নির্ভর করছে বাফুফের সাহসী এবং দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের ওপর। শুধু ‘শো’র জন্য নয়, প্রয়োজন প্রকৃত কর্ম।

অন্যথায়, হামজা-শমিতদের আলোও একদিন নিভে যাবে। ফুটবলের ঘড়িতে আবার থেমে যাবে সময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button