শিক্ষা

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম – বাংলা একাডেমি

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম :- সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ,, (আসসালামু আলাইকুম) আমাদের ওয়েবসাইটের বাংলা ব্যাকরণের অর্থাৎ বাংলা বানান লেখার ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম রয়েছে উক্ত সম্পর্কিত অর্থাৎ

তুমি তো বাংলা বানানের  নিয়ম রিলেটেড উক্তপোস্টে আপনাদেরকে স্বাগতম।  উক্ত পোস্টে আমরা আপনাদেরকে পবিত্র বাংলা বানানের নিয়ম সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানাচ্ছি। 

বাংলা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ রয়েছে এবং শব্দসমূহ একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাধ্যমে বাক্য  তৈরি হয়। এভাবে একটি বাক্য তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে বাক্যের মধ্যে যে সকল শব্দ রয়েছে প্রতিটি শব্দের বানান তৈরির ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম রয়েছে।

এজন্য শিক্ষার্থীরা যখন বাংলা বানান লিখে থাকে সেক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মসমূহ জানার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এবং পরিমার্জিত প্রক্রিয়ায় বানান লিখার ক্ষেত্রে নিয়মসমূহ জানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য। 

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

প্রমিত বাংলা বানানের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। নিম্নে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মসমূহ উল্লেখ করা হলো :-

  • তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে —

১. এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।

২. বাংলা ব্যাকরণের যে সকল তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ  উভয় শুদ্ধ থাকলে কেবল সে সব শব্দের ক্ষেত্রে ই বা উ কার চিহ্ন বসবে। 

যেমন :- কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুলি, তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পঞ্জি, পদবি, পলি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র; উর্ণা, উষা।

৩. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন:- অর্জন, উদ্ধর্ব, কর্ম, কাৰ্ত্তিক, কাৰ্য্য, বাৰ্দ্ধক্য, মূৰ্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে অর্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।

৪. বানানের নিয়মে সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে সে ক্ষেত্রে পূর্বপদ এর যে অন্তস্থিত ম্ রয়েছে সে স্থানে অনুস্বার (ং) বসবে। 

যেমন:-

অহম্+কার = অহংকার।

এভাবে ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন।

যদি সন্ধিবদ্ধ না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে  ঙ স্থানে ং হবে না। 

 যেমন:- লঙ্ঘন,,, শঙ্কা,,, বঙ্গ,,,  বঙ্কিম,,, গঙ্গা,,, কঙ্কাল,,, আতঙ্ক,,, অঙ্গ,,, আকাঙ্ক্ষা,,, অঙ্ক,,, সঙ্গী,,, সঙ্গে,,,  শৃঙ্খলা, ইত্যাদি।

৫. সংস্কৃত ক্ষেত্রে ইন্-প্রত্যয়ান্ত  কোন শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ যদি সমাজবদ্ধ হয় তাহলে সংস্কৃত বাংলা ব্যাকরণ এর নিয়ম অনুযায়ী সে ক্ষেত্রে হ্রস্ব ই-কার হবে। 

৬. বিসর্গ (ঃ)শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না।  যেমন:- প্রায়শ,,, ফলত,,, বস্তুত,,, প্রয়াত,,, প্রধানত,,, প্রথমত,,, মূলত,, পুনঃপুন,,, ক্রমশ,,, কার্যত,,,, ইতস্তত,,, ইত্যাদি। 

এছাড়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্থ বিসর্গ-বর্জিত গৃহীত হবে। যেমন : দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।

  • অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে —

১. সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন ব্যবহৃত হবে।

যেমন:- 

আরবি, আসামি, ইংরেজি, ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি, খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি, চাচি, জমিদার, জাপানি, জার্মানি, টুপি, তরকারি, দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি,

দিদি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিসি, ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, ফিরিঙ্গি, বর্ণালি, বাঁশি, বাঙালি, বাড়ি, বিবি, বুড়ি, সরকারি, সিদ্ধি, সোনালি, হাতি, হিজরি, হিন্দি, হেঁয়ালি। 

বেআইনি, বেশি, বোমাবাজি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), মামি, মালি, মাসি, মাস্টারি, রানি, রুপালি, রেশমি, শাড়ি,চুন, পুজো, পুব, মুলা, মুলো।

২. পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন:- ছেলেটি, বইটি, লোকটি।

৩. সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ ও যোজক পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন:- এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বলব? কী করছ?

কী করে যাব? কী খেলে? কী জানি? কী দুরাশা! তোমার কী! কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে! কী পড়ো! কী যে করি! কীভাবে, কীরকম, কীরূপে প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে।

৪. যেসব প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না হবে, সেইসব বাক্যে ব্যবহৃত ‘কি’ হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা হবে। 

যেমন:-  তুমি কি যাবে? সে কি এসেছিল?

৫. → এ, অ্যা যোগে:- যেন,,, জেনো,,,  দেখি,,,  দেখা,,,  গেছে,,, গেল,,, খেলি,,, খেলা,,, কেনো (ক্রয় করা),,, কেন,,, ইত্যাদি। 

তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলির ্যা-কার যুক্ত রূপ বহুল পরিচিত। যেমন :

ব্যাঙ, ল্যাঠা।

এসব শব্দে ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।

এছাড়াও বিদেশী শব্দের ক্ষেত্র অনুযায়ী কখনো কখনো অ্যা বা ্যা-কার ব্যবহার হয়ে থাকে। 

যেমন:- হ্যাট,,, ম্যানেজার,,, ভ্যাট,,, ব্যাংক,,, ক্যাসেট,,, অ্যাসিড,,, অ্যান্ড (and),,, অ্যাকাউন্ট,,, ইত্যাদি। 

৬.বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। শব্দশেষের এসব এ ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে।

৭. “”ও”” যোগে → 

যেমন :শোনানো,, শেখানো,, বসানো,,,  পাঠানো,,,  নামানো,,,  দেখানো,,,  চালানো,,, চরানো,,,  চড়ানো,,, খাওয়ানো,,,  করানো,,, হাসানো,,,

কুড়ানো,,,, নিকানো,,,বাঁকানো,,, বাঁধানো,,,  ঘোরালো,,, জোরালো,,, ধারালো,,, প্যাঁচানো; করো, চড়ো, জেনো, ধরো, পড়ো, বলো, বসো, শেখো, করাতো, কেনো, দেবো, হতো, হবো, হলো; কোনো, মতো।তবে ভবিষ্যৎ অনুকার ক্ষেত্রে শব্দের আদিতে ও- কার লেখা হয়ে থাকে। 

ট্রাফিক কাকে বলে

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

যেমন:- কোরো, বোলো, বোসো।

৮. “” ং, ঙ””” যোগে →  বাংলা শব্দের বানানের ক্ষেত্রে শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহার হয়ে থাকে।

যেমন :- গাং, ঢং, সং, পালং, রং, রাং,। কিন্তু অনুসারীর সঙ্গে কখনো কখনো সহযুক্ত হলে সেক্ষেত্রে ‘ঙ’  হবে।

 যেমন :- বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের। বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দের অনুস্বার থাকবে।

৯. “”ক্ষ, খ”” যোগে → অতৎসম শব্দে→ খিদে,,, খুদ,,, খুদে,,,খুর (গবাদি পশুর পায়ের শেষ প্রান্ত),,, খেত,,, খ্যাপা,,  ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে।

১০. “”জ, য”” যোগে →বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখিত হবে। যেমন :- কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জেব্রা, বাজার, হাজার।

১১. ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে বিকল্পে ‘য’ লেখা যেতে পারে। যেমন:- হযরত,, রমজান,, যোহর,, মুয়াজ্জিন,, নামাজ,, কাযা,, ওজু,, আজান। 

১২. মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন অতৎসম শব্দের ণ ব্যবহার করা হবে না। যেমন : ধরন,,  ঝরনা,,  পরান,, হর্ণ, সোনা,, রানি,, গোনা,, গুনতি,, গভর্নর,, কোরান,, কা,, ইরান,, অঘ্রান,,, ইত্যাদি। 

১৩. তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্যবর্ণ ণ হয়। যেমন :-কণ্টক, প্রচণ্ড, লুণ্ঠন। কিন্তু অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগে কেবল ন হবে। যেমন:- গুন্ডা, ঝান্ডা, ঠান্ডা, ডান্ডা, লন্ঠন।

১৪.   শ, ষ, স, এর ক্ষেত্রে →  এছাড়াও, বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না ।

 যেমন :-

কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহে, শখ, শয়তান, শরবত, শরম, শহর, শামিয়ানা, শার্ট, শৌখিন, আপস, জিনিস, মসলা, সন, সাদা, সাল (বৎসর), স্মার্ট, হিসাব; স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্ট্রিট, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর, ইসলাম, তসলিম, মুসলমান, মুসলিম, সালাত, সালাম, এশা, শাওয়াল (হিজরি মাস), শাবান মাস)

“”S”” 

যা সাধারণত,,  বাংলায় বিদেশি শব্দের বানানে পরিবর্তিত হয়ে→  “স,, ছ” -এর রূপ লাভ করে, ঠিক সেখানে ছ- বর্ণটির ব্যবহার থাকবে।

যেমন :- তছনছ, পছন্দ, মিছরি, মিছিল।

উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে বাংলা ব্যাকরণের প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মসমূহ আলোচনা করার মাধ্যমে জানিয়েছি। 

আশা করি, আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বাংলা অর্থাৎ তুমি তো বাংলা বানানের যে সকল নিয়ম রয়েছে তা সম্পর্কে যথাযথভাবে জানতে পারবেন এবংউপকৃত হতে পারবেন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button