জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপির বড় পরিসরের কমিটি ঘোষণা

আগামী জুলাই ও আগস্ট মাসে ২০২৩ সালের গণ–অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি স্মরণে ব্যাপক কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি ৫৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছে, যেটির নেতৃত্বে থাকছেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিকেলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ‘জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটি’ নামে গঠিত এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি নিজেই, আর সদস্যসচিব করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে।
দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা
কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বশীলরা এই কমিটিতে রয়েছেন।
এছাড়া মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে।
অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ
নারী, যুবক, ছাত্র, শ্রমজীবী ও ধর্মভিত্তিক সংগঠনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকেও নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, জাসাস, ওলামা দল, তাঁতী দলসহ প্রায় সব সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এই কমিটিতে।
শিক্ষাবিদ ও নাগরিক প্রতিনিধিরা
কমিটিতে শুধুমাত্র দলীয় নেতৃবৃন্দই নন, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং পেশাজীবীরাও রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগরের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরীন খান ছাড়াও সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও অন্যান্য নাগরিক প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছেন।
উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে বিএনপির ডাকে সারাদেশে যে গণ–আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা দলটির ভাষায় একটি গণ–অভ্যুত্থান ছিল। এই আন্দোলনের সময় ব্যাপক জনসমাগম, রাজনৈতিক সংঘাত, গ্রেপ্তার এবং নিহতের ঘটনা ঘটে। বিএনপির দাবি, সেই সময়ের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এই প্রথম বর্ষপূর্তিকে ঘিরে দলটি নানা কর্মসূচি ও স্মৃতিচারণ আয়োজন করতে চায়। তাই কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিতভাবে এ আয়োজনের জন্যই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে আরও সংগঠিতভাবে পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির নেতারা বলছেন, এই বর্ষপূর্তির আয়োজন শুধু একটি স্মরণসভা নয়, বরং তা হবে একটি বার্তা যেখানে জনগণের দাবি ও অধিকার আদায়ের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হবে।