বাংলাদেশরাজনীতি

জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব সংকট: দুই মেরুর টানাপোড়েনে দ্বিধায় দলীয় নেতাকর্মীরা

জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলটির ভেতরে স্পষ্ট বিভক্তি তৈরি হয়েছে। ২৮ জুনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ যখন সম্মেলনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, অন্য পক্ষ তখন তা বাতিল করে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করছে। এর ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা, দ্বিধা ও বিভ্রান্তি। রাজধানীর কাকরাইলে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আনুষ্ঠানিক অনুমতির অপেক্ষায় থাকা আয়োজকরা জানাচ্ছেন, সম্মেলন সফল করতে সারা দেশের জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি দল থেকে বের হয়ে যাওয়া সাবেক নেতাদেরও ফের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এই উদ্যোগের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন দলের দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তাঁদের বক্তব্য, কারো পদ দখল নয়, বরং দলকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফিরিয়ে আনাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। তাঁরা চান যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে দল পরিচালিত হোক, যেখানে সকল স্তরের নেতাদের মতামত মূল্য পাবে। তবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এই সম্মেলনকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানো নেতাদের সঙ্গে আপসের প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর অভিযোগদলকে নিজের মতো চালাতে না পেরে কিছু নেতা ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারা নিয়ে মতবিরোধের সূত্রপাত। এই ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের হাতে একক নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতার ভারসাম্য আনতেই আসছে সম্মেলন প্রস্তাবিত, বলে আয়োজক নেতাদের দাবি।

জি এম কাদের এই পরিবর্তনের কড়া বিরোধিতা করে বলেন, “আমি পরিশ্রম করব, দায় নেব, অপবাদও শুনব কিন্তু সিদ্ধান্তের সুযোগ চাইবে অন্য কেউ। এটা তো হয় না।” তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি নেতৃত্বে কোনো ভাগ-বাটোয়ারা চান না। এমনকি প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন, কিন্তু নিজের নীতিতে আপস করবেন না, এমন মনোভাবও প্রকাশ করেছেন। দলের অনেক নেতাকর্মী চাইছেন, এই সময় দল ভাঙনের পথে না গিয়ে ঐক্য ধরে রাখুক। বিশেষ করে যেহেতু জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে, তাই নেতাদের হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

এমন আলোচনাও উঠছে যে, জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান রেখেই আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করে নেতৃত্ব ভাগাভাগির একটি নতুন কাঠামো গড়া যেতে পারে। তবে সেই পথেও জি এম কাদেরের সম্মতি পাওয়া এখনও অনিশ্চিত। এই দ্বন্দ্বের ফলে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অস্পষ্টতা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবজাপা সামনে এগোবে ঐক্যের পথে, না কি ধীরে ধীরে ভাঙনের দিকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button