চশমা কেন ও কোনটা পরবেন, জানুন চোখের সমস্যা অনুযায়ী সঠিক সমাধান

বাংলাদেশে এখন অনেক শিশুই ছোট বয়স থেকেই চশমা ব্যবহার করছে। অনেক অভিভাবক চিন্তায় পড়ে যান কেন এত কম বয়সে চোখে সমস্যা হচ্ছে? চিকিৎসকদের মতে, চোখের কর্নিয়া বা লেন্স যদি আলোর প্রতিফলন ঠিকভাবে রেটিনায় না ফেলতে পারে, তাহলে কোনো জিনিস ঝাপসা দেখা যায়। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে চশমা চোখকে সঠিকভাবে আলোক প্রতিফলনে সাহায্য করে।
শিশুদের চোখে সমস্যা হয় কেন
অনেক শিশুর জন্মগতভাবেই দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা থাকতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো:
- মায়োপিয়া (Myopia): দূরের বস্তু ঝাপসা দেখা
- হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia): কাছের লেখা পড়তে সমস্যা
- অ্যাস্টিগমাটিজম (Astigmatism): দূর ও কাছ উভয়ই অস্পষ্টভাবে দেখা
এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ হতে পারে চোখের গঠনগত ত্রুটি, যা অনেক সময় বংশগতভাবে হয়ে থাকে। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রনির্ভর জীবনে স্মার্টফোন বা ট্যাবের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখে চাপ সৃষ্টি করে যা শিশুর চোখের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
চশমার ‘পাওয়ার’ কী বোঝায়
চশমার ‘পাওয়ার’ বলতে বোঝানো হয় লেন্স কতটা আলোক প্রতিফলন সংশোধন করবে। সাধারণত দুই ধরনের পাওয়ার থাকে:
- মাইনাস (-): মায়োপিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
- প্লাস (+): হাইপারমেট্রোপিয়া ও বয়সজনিত পড়ার অসুবিধায় ব্যবহার করা হয়
যদি কারও অ্যাস্টিগমাটিজম থাকে, তাহলে চশমার পাওয়ারে “সিলিন্ডার” ও “অ্যাক্সিস” নামের আলাদা মানও যুক্ত হয়।
কেন পাওয়ার বদলায়
চোখের গঠন বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। শিশুদের চোখ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার বাড়তে বা কমতে পারে। আবার বড়দের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় স্ক্রিন দেখা, ঘুমের অভাব বা চোখের অন্যান্য অসুখের কারণে পাওয়ারে পরিবর্তন দেখা যায়।
চশমার প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরণের চশমা পাওয়া যায়, যেগুলোর ব্যবহার নির্ভর করে ব্যক্তির প্রয়োজনের ওপর:
- রিডিং গ্লাস: সাধারণত ৪০ বছরের পর কাছের লেখা পড়তে সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়
- বাইফোকাল লেন্স: একই ফ্রেমে দূর ও কাছের দুই পাওয়ার থাকে
- প্রোগ্রেসিভ লেন্স: দূর, মাঝামাঝি ও কাছ তিন রকম ব্যবহারের জন্য
- পাওয়ারযুক্ত রোদচশমা: সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে
- ব্লু লাইট বা অ্যান্টি-রিফ্লেকশন কোটিং: যারা দীর্ঘসময় কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করেন, তাঁদের চোখের চাপ কমায়
চোখ ভালো রাখার নিয়ম
চোখ সুস্থ রাখতে কিছু সাধারণ অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই:
- পর্যাপ্ত ঘুম
- পুষ্টিকর খাবার
- মোবাইল ও স্ক্রিন ব্যবহারে সময়সীমা
- দিনে দিনে চোখ বিশ্রাম দেওয়া
- নিয়মিত চোখ পরীক্ষা (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ৬ মাস পরপর)
সব সমস্যার সমাধান অপারেশন নয়
অনেকে কন্ট্যাক্ট লেন্স বা লেজার সার্জারির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব সমস্যা সার্জারির মাধ্যমে সমাধান হয় না। প্রতিটি চোখের সমস্যা ভিন্ন, তাই সঠিকভাবে চেকআপ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চশমা বা লেন্স ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।