বাংলাদেশ

ঢাকায় জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধি: এক যুগের অপেক্ষার অবসান

দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধি দল। দেশে জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বহুদিন ধরেই উদ্বেগ থাকলেও এবারই তারা সরাসরি এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেল। 

রোববার (১৫ জুন) সকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের আওতায় থাকা এই বিশেষ প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছে। চার দিনের সফরে তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মানবাধিকার সংগঠন ও গুমের শিকার পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দুই সদস্য,ওয়ার্কিং গ্রুপের সহ-সভাপতি গ্রাজিনা বারানোস্কা এবং সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। সফর শেষে তারা ১৮ জুন ঢাকা ত্যাগ করবেন।

তদন্ত নয়, এবার মূল লক্ষ্য হলো পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ

এই সফরকে অনেকে ‘তদন্তমুখী’ মনে করলেও জাতিসংঘ জানিয়েছে, এটি মূলত তথ্য সংগ্রহ ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্য হলো,গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করা বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিক পরামর্শ প্রদান।

এক যুগের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল জাতিসংঘ

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরের জন্য অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘ। এরপর আরও কয়েকবার আবেদন জানালেও পূর্ববর্তী সরকারগুলো তাতে সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ ২০২০ সালে একটি আবেদন করা হয়েছিল, যার জবাবও পাওয়া যায়নি। তবে ২০২4 সালের জুলাইয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ

সফরের আগেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করেছে। ২০০৬ সালে গৃহীত এই চুক্তি ইতোমধ্যে বিশ্বের ৭৫টি দেশ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এখন ৭৬তম দেশ হিসেবে এতে যুক্ত হলো। এ সনদ অনুসারে, জোর করে গুম করা একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশে এখনো ৭০টি গুমের ঘটনা অনিষ্পন্ন

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো ৭০টির বেশি গুমের ঘটনা অনিষ্পন্ন রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ ৮৮টি ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলেও এর পূর্ণাঙ্গ জবাব এখনো মেলেনি।

মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে নতুন সম্ভাবনা

এই সফরকে মানবাধিকারকর্মীরা দেখছেন একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে দেশে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে তারা মনে করছেন।

তবে এই উদ্যোগ শুধু সফরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এমনটাই আশা সাধারণ মানুষের। তারা চাইছেন, গুম হওয়া স্বজনদের খোঁজ মিলুক, আর দোষীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button