গল টেস্টের রোমাঞ্চে শেষবেলায় নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তি বাংলাদেশের

শ্রীলঙ্কার গল ফোর্ট, যা ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ, পরে ওলন্দাজ ও ব্রিটিশদের দখলে ছিল, আজও তার ঐতিহাসিক রূপে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। শুধু ঐতিহ্য নয়, এই দুর্গের পার্শ্বেই গড়ে উঠেছে আধুনিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, আর গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি একটি বিশেষ জায়গা, যেখানে মাঠের ঠিক পাশেই বসে টেস্ট ম্যাচের ‘অ্যারিয়াল ভিউ’ উপভোগ করা যায়।
গল ফোর্টের সবুজ ঘাসের ওপর বসে মাঠের দর্শনীয় দৃশ্য উপভোগ করার মতো আর কোথাও খুব কমই আছে। টেস্ট ক্রিকেটের সাদা পোশাক পরা দুই দল যখন খেলে, তখন দর্শকেরা সহজেই বুঝতে পারেন কে ব্যাটিং করছে, কে বোলিং। এমন এক পরিবেশে ক্রিকেট দেখতে বসলে কারও পক্ষ নিয়ে চিন্তা না করেও খেলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে মাটিতে নেমে খেলা কভার করতে আসা সাংবাদিকরাও মাঝে মাঝে এই নান্দনিক মুহূর্তের মন্ত্রমুগ্ধতা অনুভব করেন।
ম্যাচের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ৪৯৫ রানে থেমে গেলেও তারা ৫০০ রানের বড় এক মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা তাড়াতাড়ি রান তুলতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কার ১৮৭ রানের ঝড়ো ইনিংস দলের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি গড়েছিল। তিনি ২০১ বল খেলে ১৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কা মারেন। নিশাঙ্কার ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট ছিল দ্রুত রান তোলার লক্ষ্য, যা দলের লাইন-আপকে উৎসাহিত করেছে।
শ্রীলঙ্কার প্রথম সেশনেই তাদের রান ছিল ১০০, যেখানে নিশাঙ্কার সঙ্গে লাহিরু উদারার জুটির অবদান ছিল ৪৭। এটি শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩০ বছর পর প্রথম ডানহাতি ওপেনিং জুটি হিসেবে মাঠে নামার ঘটনা। দ্বিতীয় সেশনে তারা আরও এক উইকেট হারিয়েছিল, কিন্তু রান সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছিলো। দিনশেষে শ্রীলঙ্কার রান ছিল বাংলাদেশের থেকে ১২৭ কম।
বাংলাদেশের বোলারদের জন্য গলের উইকেট খুব একটা সাহায্য করেনি। উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের পক্ষে, যা শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের দারুণ সুযোগ দিয়েছিল। বাংলাদেশের পেসার নাহিদ রানা শুরুতে কিছুটা কার্যকর হলেও পরবর্তী সময়ে উইকেটে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। স্পিন বোলিংয়ে নাঈম হাসান ছিলেন সবচেয়ে কার্যকরী, যদিও দলের বোলিং আক্রমণ সামগ্রিকভাবে তেমন ভালো করতে পারেনি।
গলের ঐতিহাসিক ফোর্টের প্রেক্ষাপটে এই টেস্ট ম্যাচ যেন এক বিশেষ সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া মেলবন্ধন। যেখানে একদিকে আছে প্রাচীন দুর্গের ঐশ্বর্য, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা। এই ম্যাচের মাধ্যমে কেবল ক্রিকেট প্রেমীরা নয়, সাধারণ মানুষও খেলাটির রূপমাধুর্য উপভোগ করতে পারছে গল ফোর্টের সবুজ ছায়ায়।
অতএব, গল ফোর্ট শুধু ইতিহাসের একটি স্মারক নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক প্রাণবন্ত ক্রিকেট প্রেক্ষাগৃহ, যেখানে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতিযোগিতা হাজারো দর্শকের মন জয় করছে। আগামী দিনগুলোতেও এই মাঠ থেকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিকেটের খবর আসার প্রত্যাশায় রয়েছে সমর্থকরা।