গর্ভাবস্থায় সর্দি হলে করণীয় – গর্ভাবস্থায় সর্দি দূর করার 12টি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে। সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জ্বর-সর্দি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি হলে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় যে কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য ভ্রুণ নষ্ট হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সর্দি হলে করণীয়
সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়, যা সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর উপরে প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীদেরই উচিত নিজের শরীরের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা। আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা, ব্যাথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অনেক মায়েরা ঘরোয়া উপায়ে সর্দি-কাশি দূর করার চেষ্টা করেন যাতে করে গর্ভস্থ শিশুর উপরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না পড়ে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভাবস্থায় সর্দি- কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ
গর্ভাবস্থায় সর্দি দূর করার 12টি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার
- রসুন: রসুন সর্দি- কাশি কমাতে সাহায্য করে।গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি হলে রসুন খেতে পারেন। রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টিসেপটিক, এবং অ্যান্টিভাইরাল মতো গুণাবলী, যা সর্দি-কাশি সৃষ্টি করে যেসব ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া তা প্রতিরোধ করার জন্য খুবই কার্যকরী।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে গর্ভাবস্থায় রসুন খেলে, রক্তচাপ কমে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা স্থিতি থাকে। কাঁচা রসুন খেলে বুকে জমে থাকা কফ কমে যায়।
মধু এবং পাতিলেবু: পাতিলেবুর চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যাথা কমে যায়। সর্দি-কাশি দূর করার জন্য মধু খুবই উপকারী। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল এবং ইমিউন-বুস্টিং। গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি হলে মধু খাওয়া উচিত।
হলুদ: আদার মতো হলুদও সর্দি-কাশি নিরাময়ের জন্য ভেষজ চিকিৎসা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক একটি মূল উপাদান রয়েছে।
যেটি হল একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কারকিউমিন শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বজায় রাখে। হলুদ ও আদার সংমিশ্রণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা উন্নত করে এবং সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে।
আধা চা চামচ হলুদ গুড়োর এবং লবণ দিয়ে গরম জলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ।গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি,গলা ব্যাথা,হলে এই মিশ্রণটি দিনে দুইবার গার্গল করবেন।
পানি: গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশি থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পানি খেলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে। সর্দি-কাশি হলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। কফ জমলে গরম পানি পান করতে হবে।
নারকেল তেল: সাধারণত নারকেল তেল ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। নারকেল তেলে লরিক এসিডের ঘনত্ব বেশি থাকে,যা ভাইরাস দমনে খুবই কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় নারকেল তেল ব্যবহার করা ত্বকের জন্য নিরাপদ। সর্দি থেকে মুক্তি পেতে হলে গরম পানির সাথে এক চামচ ভোজ্য নারকেল তেল মিশিয়ে খেতে পারেন। ফলে সর্দি তাড়াতাড়ি শেরে যাবে।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাদ্য গুলি বেশি করে খেতে হবে। ভিটামিন সি খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যের তালিকায় সর্বদা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখাতে হবে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন-কমলালেবু,ট্যানজারিন,কিউই, স্ট্রবেরি, আঙুল ইত্যাদি। তাছাড়াও বিভিন্ন সবজি যেমন-টমেটো,বেল, আলু, শাক-সবজি, ইত্যাদি খেতে পারেন।
আদা: গর্ভাবস্থায় সর্দির জন্য অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার হলো আদা। আদা উষ্ণতা গুণাবলীর জন্য পরিচিত। আদা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আদা খাওয়া উচিত। ছোট আদার টুকরো কুচি কুচি করে জলের ভিতর দিয়ে লেবু ও মধু দিয়ে খেলে অনেক উপকৃত হবেন।
আপেল সাইডার ভিনেগার: গর্ভাবস্থায় সর্দি নিরাময়ের জন্য আপেল সাইডার ভিনেগার খুবই উপকারী। আপেল সাইডার ভিনেগার ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ভাইরাস গুলি প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে ধ্বংস করে। গর্ভাবস্থায় সর্দির প্রথম লক্ষণ সনাক্ত হলে সাথে সাথে আপেল সাইডার ভিনেগার গ্রহণ করা উচিত।
আপেল সাইডার ভিনেগার মিশ্রণ তৈরি করার জন্য এক চামচ ভিনেগার নিয়ে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে নিতে হবে। সর্দি থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত একঘন্টা পরপর এই মিশ্রণটি খেতে হবে।
পেঁয়াজ: গর্ভাবস্থায় সর্দি-কাশির কার্যকর আয়ুর্বেদিক প্রতিকার হল পেঁয়াজ। পেঁয়াজে সালফিউরিক যৌগগুলো প্রচুর পরিমাণে থাকে যা সংক্রমণ ঘটানো ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলার জন্য খুবই উপকারী। গর্ভবতী মহিলাদের পেঁয়াজের গন্ধে বমি আসতে পারে তাই এই প্রতিকার বাদ দিয়ে অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিকার গুলো গ্রহণ করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: আপনি কি গর্ভাবস্থায় সর্দিতে ভুগছেন তাহলে আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরী। বিশ্রাম সংক্রমণের সাথে লড়াই করার জন্য দেহে শক্তি যোগায়। গর্ভাবস্থায় নারীদের দিনে দুই থেকে তিনবার অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
গরম চিকেন স্যুপ: গর্ভাবস্থায় সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বাদযুক্ত মুরগির স্যুপ তৈরি করে খেতে হবে। গরম চিকেন স্যুপ খেলে সর্দি কমে যায়। চিকেন স্যুপ হলো পুষ্টি সমৃদ্ধ। চিকেন সুপের সাথে আদা, রসুন, গোলমরিচের গুড়ো, দিয়ে খেলে সর্দির লক্ষণ গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকর হবে।
বাষ্প নিন: সর্দি-জনিত কারণে সৃষ্ট শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে বাষ্প খুবই উপকারী। ফুটন্ত জলের পাত্র থেকে বাষ্প নিতে পারেন। ফুটন্ত জলের সাথে ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করলে বন্দ নাক খোলার ক্ষেত্রে বা সাইনাসের ক্ষেত্রে কাজ করে। গলা ব্যাথা থেকে মুক্তি দিতেও বাষ্পে উপকারী।
গর্ভাবস্থায় সর্দি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের জ্বর, সর্দি ও ভাইরাস সংক্রমণ হলে শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সংক্রমণের কারণে শিশুর জন্মের পর এলার্জি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
ভাইরাস সংক্রমণ যেকোনো সময় হতে পারে তবে গর্ভাবস্থায় মায়ের ভাইরাস সংক্রমণ হলে শিশুর শারীরিক গঠনের ক্ষতি হয়। গর্ভকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সর্দি, হাঁচি,কাশি, থেকে দূরে থাকা এবং জ্বর আসলে গা মুছে জ্বর কমিয়ে রাখা উচিত।
হাম প্রতিরোধে শিশু বয়সে টিকা দিতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের শিশুর সুরক্ষায় গর্ভকালীন সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় নাক বন্ধ হলে করণীয়
শীতকালে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে গর্ভবতী নারীদের সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে মাত্রা অতিরিক্ত দূষণের ফলেও এলার্জি এবং সাইনাসের কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়।
গর্ভবতী অবস্থায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে ওষুধ গ্রহণ না করে ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রেগনেন্সির সময়ে নাক বন্ধ হলে সকাল-বিকালে গরম স্যুপ খেতে পারেন।
এতে রয়েছে প্রোটিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করে। সরিষার তেল ব্যবহার করলে বন্ধ নাক খুলে যায়। তাছাড়াও গর্ভাবস্থায় বন্ধ নাক খুলতে হলে গরম গরম খাবার খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো রকম সমস্যা হলে তার প্রভাব শিশুর উপরে পড়ে। তাই গর্ভবতী মায়েদের উচিত এই সময় নিজের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা। যাতে করে গর্ভস্থ শিশুর উপরে কোন ক্ষতিকারক প্রভাব না পড়ে। সুতরাং গর্ভস্থ শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে গর্ভবতী মায়েদেরকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।