কারক কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
কারক কত প্রকার ও কি কি :- আসসালামু আলাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটের কারক রিলেটেড উক্ত পোস্টটিতে আপনাদেরকে স্বাগতম।
আমাদের উক্ত পোস্টে পড়ার মাধ্যমে আপনারা কারো কাকে বলে এবং কারকের বিভিন্ন প্রকারভেদ উদাহরণসহ জানতে পারবেন।
বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন আলোচ্য বিষয় গুলোর মধ্যে কারক একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। শিক্ষার্থীদের কারক কাকে বলে অর্থাৎ কারকের সঙ্গে এবং কারো কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে উদাহরণ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য।
পাশাপাশি পরীক্ষায় সব বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারকের গুরুত্ব তাৎপর্য অপরিসীম। এজন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কারক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন।
কারক কি?
বাক্যে অবস্থিত পদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে তাকে কারক বলা হয়। খলিফা তাকে সাহায্য করতেন।
এখানে দেখা যাচ্ছে, ‘সাহায্য করতেন’ ক্রিয়াপদটির সাথে বাক্যের অন্যান্য পদের ভিন্ন ভিন্ন সম্বন্ধ গড়ে উঠেছে। সুতরাং বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক থাকে, তাকে কারক বলে।
কারক কত প্রকার ও কি কি?
- কারকের প্রকারভেদ:-
ক্রিয়াপদের সাথে সম্বন্ধভেদে কারক ছয় প্রকার হয়ে থাকে। যথা- ১. কর্তৃকারক; ২. কর্মকারক; ৩. করণ কারক; ৪. সম্প্রদান কারক; ৫. অপাদান কারক ও ৬. অধিকরণ কারক
১. কর্তৃকারক:-
→মনির মাদরাসায় যায়।
→ ঘোড়া গাড়ি টানে।
প্রথম বাক্যে মাদরাসায় যাওয়ার কাজ কে করেছে? মনির।
দ্বিতীয় বাক্যে গাড়ি টানার কাজ কে করেছে? ঘোড়া।
উপরের বাক্য দু’টিতে মনির এবং ঘোড়া কর্তৃকারক।
যে পদ নিজেই ক্রিয়া সম্পন্ন করে বা যার দ্বারা ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে কর্তৃকারক বলে। যেমন- গরু ঘাস খায়, রেজওয়ান, কিতাব পড়ে।
কর্তৃকারকে সাধারণত প্রথমা বিভক্তি বা শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন-
→মাসুদ কুরআন পড়ে ।
→মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় ।
তবে কোনো কোনো সময় অন্যান্য বিভক্তিও হয়ে থাকে।
যেমন:-
দ্বিতীয়া বিভক্তি : আমাকে যেতে হবে ।
তৃতীয়া বিভক্তি : আমা দ্বারা এ কাজ হবে না ।
পঞ্চমী বিভক্তি : সৎ পুত্র থেকে বংশ উজ্জ্বল হয় ।
ষষ্ঠী বিভক্তি : সকলের মরতে হবে।
সপ্তমী বিভক্তি : পাগলে কি না বলে ।
২. কর্মকারক:-
কর্তা যা করে তার কারককে কর্মকারক বলে। যেমন:-
→জেলেরা মাছ ধরে।
→ডাক্তারকে ডাক।
ক্রিয়ার নিকট প্রশ্ন করলে- কি ধরে? মাছ। কাকে ডাক? ডাক্তার ।
ক্রিয়াকে কি বা কাকে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই কর্মকারক।
কর্মকারকে সাধারণত কে, রে (দ্বিতীয়া) বিভক্তি হয়। যেমন-
→মা সন্তানকে ভালোবাসে।
→ছেলেরা মাঠে খেলা করে ।
কর্মকারকে অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার:-
- প্রথমা (শূন্য) বিভক্তি : ছেলেরা বল খেলে ।
- ষষ্ঠী বিভক্তি : হুজুর আমাদের পড়ান।
- সপ্তমী বিভক্তি : আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
৩. করণ কারক:-
→ আমরা কলম দিয়ে লেখি ।
→ হাত দ্বারা কাজ কর।
→ উপরের বাক্যগুলোতে-
→ কি দিয়ে লেখি? কলম দিয়ে,
→ কিসের দ্বারা কাজ করি? হাতের দ্বারা।
সুতরাং কর্তা যে উপায়ে, যার দ্বারা সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণ কারক বলে ।
- করণ কারকে সাধারণত তৃতীয়া (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক) বিভক্তি হয়।
যেমন:-
→কৃষক লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে
→খালেদ কলম দিয়ে লেখে।
- করণ কারকে অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার:-
→ প্রথমা (শূন্য) বিভক্তি : মেয়েরা নামাজ পড়ে ।
→ পঞ্চমী বিভক্তি : আমা থেকে এ কাজ হবে না ।
→ষষ্ঠী বিভক্তি : তোমার হাতের কাজ সুন্দর ।
→সপ্তমী বিভক্তি : টাকায় কি না হয় ।
→ভিখারিকে মায়া কর । ইত্যাদি।
৪. সম্প্রদান কারক:-
* সৎ পাত্রে কন্যা দান কর ।
অতএব, যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কোনো কিছু দান করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে ।
বাংলাতে সম্প্রদান কারকে সাধারণত ‘কে’ এবং ‘রে’ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
- অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার:-
→শূন্য বা প্রথমা বিভক্তি : ভিক্ষা দাও, দেখিলে ভিক্ষুক।
→চতুর্থী বিভক্তি : পিপাসার্তকে পানি দাও ।
→সপ্তমী বিভক্তি : অন্ধকে আলো দাও ।
৫. অপাদান কারক:-
যেমন:-
গাছ থেকে ফল পড়ে, তিলে তেল হয়, জমি থেকে ফসল পাই, পাপে বিরত হও, ইত্যাদি। ক্রিয়াকে ‘কি হতে বা থেকে’ ‘কোথা থেকে’ প্রভৃতি দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অপাদান কারক ।অপাদান কারকে সাধারণত পঞ্চমী বিভক্তি হয়।
- অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার
→শূন্য বা প্রথমা বিভক্তি : পাকা ফল গাছে থাকে না ।
→দ্বিতীয়া বা ‘কে’ বিভক্তি : আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর ।
→চতুর্থী বিভক্তি : যেখানে বাঘের ভয়,সেখানে সন্ধ্যা হয় ।
→ সপ্তমী বিভক্তি : লোকমুখে শুনেছি।
৬. অধিকরণ কারক:-
ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়া যে স্থানে অথবা যে সময়ে নিষ্পন্ন হয়, তাকে অধিকরণ কারক বলে।
যেমন:-
তিলে তেল আছে, বনে বাঘ আছে। ক্রিয়াকে কোথায়’ ‘কখন’ দিয়ে প্রশ্ন করলে অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
অধিকরণ কারকে সাধারণত সপ্তমী বিভক্তি হয়।
যেমন- পাঠে মন দাও ।
- অধিকরণ কারকে অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার:-
→প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি : আমি বরিশাল যাই ।
→তৃতীয়া বিভক্তি : ছায়াঢাকা পথ দিয়ে চলতে আরাম ।
→পঞ্চমী বিভক্তি : বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়।
→সপ্তমী বিভক্তি : এ বাড়িতে কেউ নেই ।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে কারো কাকে বলে এবং কারকের বিভিন্ন প্রকারভেদসহ বিভিন্ন প্রকারভেদের উদাহরণ সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আশা করি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কারক সম্পর্কিত যে সকল তথ্য জানতে চান অথবা জানতে চেয়েছেন তা যথাযথভাবে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।