জীবনযাপন

বড়দের কি এডিএইচডি হয়? চিকিৎসকেরা যা বলছেন


ঢাকা, জুন ২০২৫দীর্ঘদিন ধরে ধারণা ছিল ADHD নামের স্নায়বিক সমস্যাটি শুধু শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। স্কুলে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, এক জায়গায় বসে না থাকা, কিংবা বেশি চঞ্চল হওয়া এসব বিষয়ই ছিল মূলত ছোটদের মধ্যে লক্ষ্য করা উপসর্গ। তবে সময় বদলেছে। এখন চিকিৎসকের চেম্বারে বড়দের মধ্যেও এই সমস্যার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ADHD যার পূর্ণরূপ Attention Deficit Hyperactivity Disorder এটি একটি স্নায়ু ও মানসিক জটিলতা, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় অচিহ্নিত থেকে যায়। যার ফলে বড়দের জীবনে এর প্রভাব হয় আরও গভীর।

ADHD কী ধরনের সমস্যা

ADHD হলো এমন এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে ব্যক্তির মস্তিষ্কের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। কোনো একটি কাজ বা চিন্তায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সাথে যোগ হয় অতিরিক্ত অস্থিরতা ও রাগজনিত আচরণ। এসব লক্ষণ যদি কেউ নিয়মিত অনুভব করেন, তবে সেটিকে আর সাধারণ সমস্যা বলা যায় না।

এটি শিশু বয়সে শুরু হলেও, অনেক সময় তা বয়স বাড়লেও থেকে যায় যেটিকে বলে Adult ADHD। সমস্যা হলো, বড়দের মধ্যে এটি চিহ্নিত করা কঠিন। কারণ অনেকেই এটিকে নিজের দুর্বলতা বা মানসিক চাপ ভেবে এড়িয়ে যান।

বড়দের মধ্যে ADHD-এর লক্ষণগুলো কেমন

মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা:

যেকোনো আলোচনায় বা কাজের সময় মনোযোগ অন্যদিকে সরে যায়। কেউ কিছু বলছে, মাঝপথে সেটা শুনে রাখা যায় না। অফিস বা বাসার কাজে মন বসে না।

চেষ্টা করেও ভুল হয়ে যাওয়া:

দিনের সাধারণ কাজেও বারবার ভুল হয়। হয়তো ফোন কোথায় রেখেছেন মনে থাকে না, জরুরি কিছু লিস্টে লেখেননি এই ধরনের ছোট ভুলগুলো নিয়মিত হয়।

কাজ শেষ করতে কষ্ট:

শুধু শুরু করেই থেমে যাওয়া নয়, অনেক সময় কোনও কাজ শেষ করার আগ্রহই থাকে না। মনে হয়, সব কাজ যেন ক্লান্তিকর।

অস্থিরতা ও দ্রুত রাগ:

এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে না পারা, কথা বলতে বলতেই উঠে যাওয়া, এমনকি কেউ কিছু বললেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া এসব আচরণও ADHD-এর অংশ হতে পারে।

সামাজিক দূরত্ব:

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সমস্যা হয়। কী বলা উচিত, কোথায় থামতে হবে এই আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যায়। ফলে ধীরে ধীরে একাকিত্ব বাড়ে।

কেন সমস্যা বেশি করে দেখা দেয় বড়দের মধ্যে

চিকিৎসকদের মতে, অনেকেই ছোটবেলায় ADHD-তে আক্রান্ত থাকলেও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় তা বড় হয়েও থেকে যায়। অন্যদিকে, কর্মজীবন, পারিবারিক চাপ, সামাজিক দায়িত্ব সবকিছু মিলে সমস্যা আরও প্রকট আকার নেয়। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক অবস্থা।

কী করা যেতে পারে

এই সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার নয়। বরং কিছু ধাপ অনুসরণ করলেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়

  • নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক সচেতনতা
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং সময়মতো ঘুমানো
  • টেলিভিশন, স্মার্টফোন বা অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কমানো
  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা প্রার্থনার অভ্যাস
  • পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা
  • প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ADHD পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনেক সময় কিছু ওষুধ এবং নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন অত্যন্ত কার্যকর হয়।

বাংলাদেশে কতটা সচেতনতা রয়েছে এই বিষয়ে

এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকরা বলেন, এখনো বাংলাদেশে ADHD নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। অনেকেই মানসিক রোগ বলতে ভয় পান বা লজ্জা বোধ করেন। অথচ সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ।

ঢাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান বলেন, ADHD শিশুদের যেমন হয়, বড়দের মধ্যেও এটা তীব্র হতে পারে। মূল বিষয় হলো  চিনে নেওয়া আর সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া। নিজেকে দোষ না দিয়ে সঠিক পথে এগোনোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ADHD কোনো লজ্জার বিষয় নয়। এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত মানসিক অবস্থা। সমাজ, পরিবার এবং নিজস্ব সচেতনতা এই তিনের সমন্বয়ে একজন ব্যক্তি নিজেকে এই অবস্থার মাঝেও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারেন।

সময় থাকতে নিজের দিকে খেয়াল রাখুনআপনার মনোযোগ কি আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button