উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকারও কি কি? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
উপসর্গ কাকে বলে :-আসসালামু আলাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটের বাংলা উপসর্গ বিষয়ক উক্ত পোস্টে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের উক্ত পোস্টে পড়ার মাধ্যমে আপনারা উপসর্গ রিলেটেড বিভিন্ন তথ্য যেমন —
→ উপসর্গ কাকে বলে?
→ কত প্রকারও কি কি?
→ উপসর্গের বৈশিষ্ট্য প্রয়োজনীয়তা,,,, ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন আলোচনার বিষয়ের মধ্যে উপসর্গ অন্যতম। ব্যাকরণের সকল বিষয়কে যথাযথভাবে জানার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণের অন্যতম অংশ উপসর্গ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা মুখ্য।
আমাদের উক্ত পুষ্টি পড়ার মাধ্যমে বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় অর্থাৎ উপসর্গ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারবে।
উপসর্গ কাকে বলে
উপ’ শব্দটির অর্থ হলো → ‘ পূর্বে ‘,,,এবং ‘সর্গ’ শব্দটির অর্থ হলো অবস্থান। ব্যাকরণের মত অনুযায়ী,
যে সকল বর্ণ সমষ্টি বা বর্ণ কোন দাতুর বা কোন শব্দের পূর্বে বসে ধাতুকে বা শব্দটিকে অর্থের ব্যঞ্জনা অর্থাৎ বিপরীত, পূর্ণাঙ্গতা তথা পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ ও সংকোচন ইত্যাদি পরিবর্তন ঘটায় তাকে উপসর্গ বলে।
যে সকল অব্যয় পদ সমূহ কোন ধাতু বা শব্দের আগে বসে ধাতুর অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং নতুন শব্দ গঠন করে, সে সকল অব্যয় পদকে উপসর্গ বলা হয়।
যেমন :- আ, সু, বি.নি. হাফ,নির, সম, অপ, পরা, অ, ফুল, ফি, পা, প্র,,,,, ইত্যাদি।
উপসর্গ কত প্রকারও কি কি?
উপসর্গ সাধারণত তিন প্রকার। যথা:-
১) সংস্কৃত উপসর্গ,,,
২) বাংলা উপসর্গ,,,
৩) বিদেশী উপসর্গ ।
১) সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ:-
বাংলা ভাষায় যে সকল উপসর্গগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে এসে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেই সকল উপসর্গকে তৎসম উপসর্গ বা সংস্কৃত উপসর্গ বলা হয়। মোট সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গের সংখ্যা হল ২০ টি।
উদাহরণ :- আ, উপ, অপি, অতি, অভি, প্রতি, পরি, উৎ, সু, অভি, বি, দূর, নির, অনু, নি, সম, অপ, পরা, প্র।
২) বাংলা উপসর্গ:-
বাংলা ভাষায় যে সকল উপসর্গগুলো আরো যদি আগমনের পূর্বে যে সকল জনজাতি বসবাস করত তাদের বাসা থেকে এসে বাংলা ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে এবং ব্যবহৃত হয়েছে সেই সকল উপসর্গগুলোকে বাংলা উপসর্গ বলা হয়।
উদাহরণ :- উন, ইতি, আব, আন, আড়, অনা, অজ, কু, অঘা, বি,, ইত্যাদি।
৩) বিদেশি উপসর্গ :-
বিদেশীদের আগমনের মাধ্যমে বিদেশি যে সকল ভাষা রয়েছে সেগুলো থেকে কিছু উপসর্গ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং সে সকল উপসর্গগুলোকে বিদেশী উপসর্গ বলা হয়।
উদাহরণ :- ফুল, হেড, বর, নিস, বধ, ব, বে, হর, খাস, দর, ফি, গর, সাব,,,, ইত্যাদি।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য
বাংলা ভাষায় উপসর্গের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথাক্রমে :-
১. উপসর্গ সবসময় শব্দ বা ধাতুর পূর্বে অবস্থান করি।
২. উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
৩. ভাষার ক্ষেত্রে উপসর্গের পৃথক বা স্বাধীন কোন ব্যবহার নেই।
৪. সাধারণত এক ধরনের অব্যয়ী জাতীয় বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি।
৫.উপসর্গ অন্যান্য শব্দের সাথে মিশে নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।
৬. উপসর্গসমূহ সাধারণত একটি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করে।
৭. একটি উপসর্গ একটি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে মূল শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা
উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। উপসর্গের মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। যার মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে শব্দের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। এ যারা উপসর্গ ব্যবহার করার মাধ্যমে ভাব- ব্যন্জ্যনা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও উপসর্গ ব্যবহারের ফলে প্রকাশ ক্ষমতা অর্থাৎ বাংলা ভাষার যে প্রকাশ ক্ষমতা রয়েছে তা দ্বিগুণ আকারে বেড়ে যায়। হয়তো এ কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপসর্গকে মাছের পাটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কেননা পাখনার সাহায্যে মাছ যেমন তার গতি লাভ অনুযায়ী ইচ্ছেমতো যে কোন দিকে যেতে পারে ঠিক তেমনি উপসর্গ প্রয়োগ করা মাধ্যমে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিস্তৃতি ঘটানো যায়।
বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারী অর্থ-সম্প্রসারণ উপসর্গের মাধ্যমে ঘটে। এছাড়াও নির্দিষ্ট কোনো শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করার মাধ্যমে শব্দের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অর্থ সম্প্রসারণ ঘটে। যার মাধ্যমে শব্দে প্রচলিত অর্থের আবেদনে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়।
এছাড়াও উপসর্গের মাধ্যমে অনেক সময় ভাষার মধ্যে পরিভাষা সৃষ্টি করা হয়। এছাড়াও অধিগ্রহণ হিসেবে এবং রিবাহী হিসেবে বিভিন্ন গুণাবলী বিবেচনা করার মাধ্যমে ব্যাকরণে উপসর্গের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। তাছাড়া উপসর্গ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় নয় বরং উপসর্গ হলো ভাষার পক্ষে পরিহার্য বিষয়।
উক্ত পোস্টে আমরা আপনাদেরকে উপসর্গ রিলেটেড বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি,, আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে উপসর্গ সম্পর্কিত যে সকল তথ্য বা মতামত আপনারা জানতে চান তা যথাযত ভাবে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।