ইরানে ইসরায়েলি হামলা: মধ্যপ্রাচ্যে কি আরেক মিত্রকে হারাতে যাচ্ছে রাশিয়া?

ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার প্রেক্ষাপটে রাশিয়া এক অস্বস্তিকর কূটনৈতিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়া প্রথমে এটিকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করলেও, বাস্তবে তারা কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। রুশ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাতে রাশিয়ার লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেশি।
সংঘাতের শুরুর দিকেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ও প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো এটিকে নিজেদের জন্য সম্ভাব্য এক ইতিবাচক সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেছিল। তারা বলছিল, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে রাশিয়ার রাজস্ব বাড়বে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ সরে যাবে। এমনকি মস্কোভস্কি কোমসোমোলেত্স পত্রিকায় একটি শিরোনাম ছাপা হয়: **‘কিয়েভকে ভুলে গেছে’**।
কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার জন্য বিষয়টি যে কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই কর্তুনভ লিখেছেন, “এই সংঘাত রাশিয়ার জন্য শুধু একটি আঞ্চলিক উত্তেজনা নয়, বরং সরাসরি কৌশলগত ক্ষতির বার্তা।” তিনি আরও বলেন, “মাত্র কয়েক মাস আগেই মস্কো এবং তেহরান একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু ইসরায়েলের এই হামলার মুখে মস্কো ইরানকে সহায়তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।”
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এই মুহূর্তে শুধু কূটনৈতিক বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে। তারা ইরানকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয়, এমনকি তাদের অংশীদারিত্ব চুক্তিটি সামরিক নয় বলেই রাশিয়া নিজেকে দায়মুক্ত রাখতে চাইছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, চুক্তিতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, মস্কো এখনই কোনো সংঘাতে সরাসরি জড়াতে চাচ্ছে না।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ার আরও একটি দিক হলো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতি। দীর্ঘদিন ধরে আসাদ ছিলেন রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। এখন যদি ইরানেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবর্তন আসে, তবে রাশিয়া তাদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মিত্রকেও হারাতে পারে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নিচ্ছেন। এক সময় যেটি ছিল ‘রাশিয়ার দাভোস’, এখন তা অনেকটাই নিস্তেজ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের বড় অংশই এই ফোরাম থেকে দূরে রয়েছে, যদিও আয়োজকেরা বলছে, এবার ১৪০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি সেখানে অংশ নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া চাইছে এই ফোরামের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে যুদ্ধের কারণে তারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কিন্তু একইসঙ্গে তারা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন। কারণ, এই অঞ্চলে রাশিয়ার মিত্র ও প্রভাব উভয়ই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।