বিশ্বরাজনীতি

বর্তমানে ইরানে ইসরায়েলের হামলা: কেন এখনই এই সিদ্ধান্ত?

ইরানে ঢুকে শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলা, ইসরায়েলের ‘নতুন কৌশল’ নিয়ে উদ্বেগ

ইরানের ভেতরে এবার ইসরায়েলের হামলা শুধু ভয়াবহই নয়, বরং বেশ জটিল ও কৌশলগত। গত বছরের তুলনায় এবারের আক্রমণ অনেক বিস্তৃত, যেখানে শুধু সামরিক ঘাঁটি নয়, বরং ইরানের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের ওপর সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এবার ‘ডিক্যাপিটেশন স্ট্র্যাটেজি’ অর্থাৎ নেতৃত্ববিহীন করে দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে।

কারা ছিলেন টার্গেটে?

তেহরান থেকে আসা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই হামলায় ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান, বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং একাধিক পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। যদিও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলার কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হয়নি।

ইসরায়েলি হামলার ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে, লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর চালানো অভিযানের কৌশলই এবার ইরানে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই সময় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছিলেন, যা সংগঠনটির জন্য ছিল বড় ধাক্কা।

নেতানিয়াহুর ‘অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে ‘অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর দাবি, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।

একজন সিনিয়র ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরান ইতোমধ্যেই এত ইউরেনিয়াম মজুত করেছে যে, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তারা অন্তত ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

সময়ের হিসাব মেলাচ্ছেন নেতানিয়াহু?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলার সময়টিও ছিল কৌশলগত। কারণ, তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। নেতানিয়াহু হয়তো চেয়েছেন আলোচনার আগেই এমন এক হামলা চালিয়ে চুক্তির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিতে।

ইসরায়েল মনে করছে, হিজবুল্লাহসহ ইরানের আঞ্চলিক মিত্ররা এখন আগের মতো শক্তিশালী নয়। তাই এই মুহূর্তে ইরানকে চাপে রাখলে তারা বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়তে পারবে না।

ইরান কি চুপ থাকবে?

এমন কৌশলগত আঘাতের পর ইরান নিশ্চুপ থাকবে, তা ভাবা কঠিন। ইতিমধ্যে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করেছে। তবে শীর্ষ নেতাদের হত্যায় তাদের প্রতিরোধের সক্ষমতা কতটা টিকে থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।এখন দেখার বিষয়, নেতানিয়াহুর এই হামলা কি সত্যিই ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, নাকি মধ্যপ্রাচ্যে আরও ভয়াবহ সংঘাতের পথ খুলে দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button