বিশ্বআন্তর্জাতিকরাজনীতি

আরব দেশগুলোর নীরবতায় একা হয়ে পড়েছে ইরান, ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যয়

ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলায় বিপর্যস্ত ইরান, পাশে নেই মিত্ররাও

বিশেষ প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে আবারও চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের এক নজিরবিহীন সামরিক হামলায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে ইরান। হামলার পরপরই উপসাগরীয় অঞ্চলের কিছু দেশ প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও, ইরান এখন এক প্রকার নিঃসঙ্গ। তেহরানের দীর্ঘদিনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত হিজবুল্লাহ, হুতি কিংবা হামাস—কেউই এখন সক্রিয়ভাবে পাশে দাঁড়ায়নি।

আঘাতের পর নীরবতা

গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের চালানো ভয়াবহ বিমান হামলায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে যতটা দ্রুত এই হামলা হয়েছে, ততটাই ধীর প্রতিক্রিয়া এসেছে তেহরানের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে চুপ করে গেছে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও।

হিজবুল্লাহ শুধু বিবৃতি দিয়েছে, হামলার হুমকি দেয়নি। হুতিদের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চোখে পড়েছে, তবে আগের মতো ব্যাপকভাবে নয়। হামাসও কার্যত নীরব। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব গোষ্ঠীর বহু যোদ্ধা ও অস্ত্রভাণ্ডার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—ফলে তারা এখন আর আগের মতো শক্তিশালী নয়।

কূটনীতিতে দ্বিমুখী খেলায় উপসাগরীয় দেশগুলো

সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইনসহ একাধিক উপসাগরীয় দেশ এই হামলার নিন্দা করলেও বাস্তবে কেউই ইরানের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং অনেকে মনে মনে তেহরানকে দুর্বল হতে দেখতেই স্বস্তি পাচ্ছে। কারণ ইরানকে এই অঞ্চলের অনেক দেশ একটি আঞ্চলিক হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব দেশ নিজেদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েই বেশি চিন্তিত। যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি থাকায় তারা ভয় পায়, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে নিজেদের দেশেও বড় বিপদ ডেকে আনবে। পাশাপাশি তেলের দামে অস্থিরতা ও উন্নয়ন প্রকল্পেও এর প্রভাব পড়বে।

ইরানের ভরসা কোথায়?

ইরান তার আঞ্চলিক প্রভাব ও মিত্র গোষ্ঠীর ওপর ভরসা করেই এতদিন ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি। কিন্তু আজ যখন প্রয়োজন, তখন সেই মিত্ররাই চুপ। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের পর সেখান থেকেও ইরান তার সেনা ফিরিয়ে নিয়েছে। ইরাকের মিলিশিয়ারা এখন সরকারপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে গেছে। ফলে ইরানের পুরনো জোট কার্যত ভেঙে পড়েছে।

সৌদি আরবের নতুন ভূমিকা

সৌদি আরব এখন আর আগের মতো সরাসরি বিরোধে জড়াতে চায় না। বরং তারা কূটনৈতিক সমঝোতায় বিশ্বাস রাখছে। চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে রিয়াদ। একইসঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়েও তারা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে।

আব্রাহাম চুক্তি’ আর নীরব প্রত্যক্ষদর্শীতা

২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা দেশগুলোর তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কোসহ আরও কয়েকটি দেশ যুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবও ধীরে ধীরে এই চুক্তির দিকে এগোচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাদের উদ্দেশ্য—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের উন্নত সামরিক প্রযুক্তি এবং নজরদারি সরঞ্জাম পাওয়া।

এই বাস্তবতায়, ইরানকে নিয়ে সরব হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না কেউই। কারণ তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হোক কিংবা নতুন কোনো যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়ুক।

শেষ কথা

বর্তমানে ইরান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেকটা একা হয়ে পড়েছে। একদিকে ইসরায়েলের শক্ত আঘাত, অন্যদিকে মিত্রদের নীরবতা—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পরবর্তী অধ্যায় হয়তো আরও অস্থির হতে চলেছে। এই পরিস্থিতি শুধু তেহরানের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button