বিশ্বরাজনীতি

আগেই ইরানে ঢুকে কীভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ

শিরোনাম:
ইরানে ‘রাইজিং লায়ন’ নামে গোপন হামলা: শীর্ষ সেনা ও বিজ্ঞানীদের হত্যার অভিযোগে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইসরায়েলের একটি গোপন সামরিক অভিযানের ঘটনায়, যেখানে ইরানের ভেতরে ঢুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দেশটির শীর্ষ সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের। ‘রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত এই অভিযান ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

বিশ্ব গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান যখন ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখনই ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় হয়ে ওঠে একাধিক গোপন গোয়েন্দা দল, সশস্ত্র ড্রোন এবং বিস্ফোরকে ভরা যানবাহন। মূলত, মোসাদের সমন্বয়ে মাসের পর মাস ধরে সাজানো এই পরিকল্পনার বাস্তব রূপই দেখা যায় সেই রাতেই।

হামলার টার্গেটে ছিলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, এবং পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি। ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র দাবি করেছে, এসব হামলার মাধ্যমে ইরানের সামরিক নেতৃত্বে এক বড় ধরনের আঘাত হানা হয়েছে।

তেহরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও কৌশলগত স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিছু বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল সাধারণ গাড়ির ভেতরে, আবার কিছু ড্রোনের মাধ্যমে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পাঠানো হয়। এসব বিস্ফোরণে শুধু প্রাণহানি নয়, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবকাঠামো ধ্বংসও হয়।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, এই অপারেশন ছিল বহুস্তরবিশিষ্ট এবং দীর্ঘ পরিকল্পনার ফল। মোসাদ বহু আগেই এসব অস্ত্র ইরানের ভেতরে পাচার করে রেখেছিল এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একযোগে হামলা চালিয়ে ইরানের নেতৃত্ব পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

এদিকে, ইরান এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতগুলো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার একযোগে নিহত হওয়া ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা।

হামলার পর ইসরায়েলি পক্ষ থেকে একধরনের “মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের”ও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইরানি কর্মকর্তাদের ফোনে, দরজার নিচ দিয়ে কিংবা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে হুমকি পাঠানো হয়, যাতে বোঝানো হয় তাদের গতিবিধির সবকিছুই ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনায় প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন জানান। এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি বলেন, “তারা এখন সবাই মৃত। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যায়, তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ হামলা আসবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের সামরিক ও পরমাণু শক্তিতে এই হামলা কিছুটা ধাক্কা দিলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভর করবে ইরানের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button