আখিরাত কাকে বলে? আখিরাতের সংজ্ঞা, পরিচয় এবং ধাপ সমূহ
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ,, আমাদের ওয়েবসাইটের শিক্ষা রিলেটেড ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা মৃত্যুর পরবর্তী জীবন অর্থাৎ আখিরাত নিয়ে লিখিত পোস্টে আপনাদেরকে স্বাগতম।
আমাদের উক্ত পোস্টে আমরা আপনাদেরকে —আখিরাত কাকে বলে,, আখিরাতের পরিচয়,, আখিরাতের স্তর কয়টি ও কি কি,, ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানাচ্ছি।
ইসলামী জীবন পরিধি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জীবনের দুইটি পর্যায় রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র বলা হয়ে থাকে।
কেননা প্রতিটি মুসলিম দুনিয়ার জীবনে যে সকল কাজকর্ম করবে তাদের ফলস্বরূপ আখেরাত লাভ করবে। এজন্য একজন প্রকৃত মুমিনকে ইসলামী জীবন পরিধি সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে আখেরাত সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আখিরাত কাকে বলে
আখিরাত অর্থ পরকাল। মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলে। মানবজীবনের দুটি পর্যায় রয়েছে। যথা ইহকাল ও পরকাল। দুনিয়ার জীবনকে ইহকাল এবং মৃত্যুর পরের জীবনকে পরকাল বলে।
পরকালের জীবনের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। এখানে মানুষ চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। পরকালে মানুষ ভালো কাজের জন্য জান্নাত ও খারাপ কাজের জন্য জাহান্নাম লাভ করবে।
আখিরাত,, যা হচ্ছে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ।সাধারণত বাংলা ভাষায় আখিরাতকে পরকাল ও বলা হয়। ইসলামী পরিভাষা অনুযায়ী মানুষের মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে যে নতুন জীবনের শুরু হয় তা হল পরকাল অর্থাৎ আখেরাত। আখিরাতের জীবনের সূচনা আছে কিন্তু এর অনন্ত বা শেষ নেই। কেননা আখেরাতের জীবন হল চিরস্থায়ী জীবন।
আখিরাতের পরিচয়
আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং পুণ্য কাজ করতে উৎসাহ যোগায়। কেননা, আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ জানে যে, পরকালে তাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, দুনিয়ার সব কাজ কর্মের হিসাব দিতে হবে।
অপরদিকে আখিরাতে যে বিশ্বাস করে না সে সুযোগ পেলেই পাপাচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। — তাই আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস মানবসমাজে পাপচার বৃদ্ধি করে। মানবজীবনকে কলুষমুক্ত, পবিত্র ও সুন্দর করে তুলতে আখিরাতে বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র সমতুল্য। কৃষক যেমন ক্ষেতে ভালোভাবে চাষাবাদ করলে ভালো ফলন পায়, তেমনি যে কেউ দুনিয়াতে ভালোভাবে ইসলামের বিধিবিধান মেনে কাজ করলে আখিরাতে সে এর ভালো বিনিময় পাবে।
আর শস্যক্ষেত্র পরিচর্যা না করলে যেমন ফসল ভালো হয় না তেমনি মিথ্যাচার, পাপাচার ও অনৈতিক কাজের জন্য আখিরাতে শাস্তি ভোগ করবে। তাই দুনিয়াকে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র বলা হয় ।
যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে সে প্রত্যহ তার প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেই নিয়ে থাকে। এভাবে দৈনন্দিন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ তার ভুল-ত্রুটি শুধরিয়ে নিয়ে চরিত্রবান হিসেবে গড়ে ওঠে আখিরাতে পুণ্যবানকে জান্নাত দেওয়া হবে ।
জান্নাত লাভের আশা মানুষকে দুনিয়ার জীবনে সৎকর্মশীল করে তোলে। জাহান্নাম অতি কষ্টের স্থান। দুনিয়ার জীবনের পাপী, অবাধ্য ও মন্দ আচরণের লোকদের পরকালে জাহান্নামে ঢোকানো হবে। তাই জাহান্নামের শাস্তির ভয় মানুষকে অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত রাখে।
আখিরাতের স্তর কয়টি ও কি কি
আখিরাত বা পরকালের দুটি পর্যায় রয়েছে । যথা-
ক. বারযাখ
খ. কিয়ামত।
ক) বারযাখ:-
মানুষের মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত বা পুনরুত্থান পর্যন্ত যে দুটি সময় রয়েছে এই সময়কে বারযাখ বলা হয়। অর্থাৎ বারযাখ হলো দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী পর্যায়।
মানুষের দুনিয়ার জীবন এবং কেয়ামত এই দুইটি জীবনের মধ্যবর্তী যে পর্দা তাকে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও মানুষের মৃত্যুর পরে এই বারযাখের জীবন শুরু হয়।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
অর্থ : –
অর্থাৎ তাদের সামনে রয়েছে পুনরুত্থান বা বারযাখ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে ” → (সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত ১০০) বারযাখ, যা হচ্ছে কবরের জীবন । বারযাখের জীবনে মানুষ দুনিয়ার যত ভালো আমল করেছেন তা এবং খারাপ আমল করেছেন সেগুলোর শাস্তি এবং শান্তি ভোগ করার জায়গা।
খ) কিয়ামত:-
কিয়ামত শব্দটির অর্থ দণ্ডায়মান হওয়া, উঠা। ইসলামী পরিভাষা অনুযায়ী কবর থেকে মানুষ উঠে যেদিন মহান আল্লাহতালার সামনে দাঁড়াবেন তখন সে এই সময় কি কেয়ামত বলা হবে।
অর্থাৎ কেয়ামতে মানুষকে মহান আল্লাহ তা’আলা পুনরায় জীবিত করবেন। অতঃপর হিসেবের মাধ্যমে নেককার বান্দাদেরকে জান্নাতে এবং পাপীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
এছাড়াও আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে এরূপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং পবিত্র করে তোলে। সুতরাং আমরা আখিরাতে বিশ্বাস করব এবং নৈতিক ও পূত-পবিত্র জীবনযাপন করব।
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে আখিরাত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যেমন আখিরাত কাকে বলে,, আখিরাতের বিভিন্ন স্তর ও আখিরাতের পরিচয় সম্পর্কে জানিয়েছি।
আশা করি,, আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা আখিরাত সম্পর্কে যে সকল তথ্য জানতে চেয়েছেন তা যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে উপকৃত হতে পেরেছেন।