অনলাইনেও চলছে ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ: হ্যাকারদের হামলায় বিপর্যস্ত সাইবার নিরাপত্তা

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন ও সাইবার জগতে। সামরিক হামলার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ভয়াবহ সাইবার আক্রমণ, যেখানে টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক, টেলিভিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা র্যাডওয়্যার জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে ইরানে বোমা হামলার পর ইসরায়েলি সাইবার অবকাঠামোর ওপর হামলার পরিমাণ প্রায় ৭০০ শতাংশ বেড়েছে। ইরানপন্থী হ্যাকার গ্রুপগুলো প্রতিশোধমূলক কার্যক্রম হিসেবে এই আক্রমণ চালাচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের মোবাইল নেটওয়ার্কে হানা দিয়ে হান্ডালা নামে একটি হ্যাকার গ্রুপ ভুয়া ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে সাধারণ গ্রাহকদের মোবাইলে। এমনকি, হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নাম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো বার্তাও প্রেরণ করেছে তারা।
এই গ্রুপটি আরও দাবি করেছে যে, তারা ইসরায়েলের বড় বড় জ্বালানি ও নির্মাণ কোম্পানি থেকে দুই টেরাবাইটের বেশি তথ্য চুরি করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি হ্যাকার গ্রুপ ‘প্রেডেটরি স্প্যারো’ ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ‘নোবিটেক্স’ হ্যাক করে প্রায় ৯ কোটি ডলারের ডিজিটাল মুদ্রা চুরি করেছে বলে দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সেপাহ’র তথ্য ধ্বংস করে তাদের ওয়েবসাইট অচল করে দিয়েছে।
সাইবার হামলার আওতায় এসেছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেলও। সেখানে সরকারবিরোধী বার্তা সম্প্রচার করা হয়েছে। যদিও এই হামলার দায় কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো এই সাইবার হামলার কারণে ইরান এখন দেশের ভেতরে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। রাতের বেলায় দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে বিদেশি হামলা ও তথ্য ফাঁস ঠেকাতে চাইছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধ কেবল সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং তা এখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোগুলোর ওপর হামলায় রূপ নিচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাইবার যুদ্ধের এই বিস্তার ভবিষ্যতের জন্য এক বড় হুমকি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।