প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জীবের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য: বিভিন্ন জীবের বৈচিত্র সমূহ জানা প্রয়োজন। পাশাপাশি বৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিটি জীবের নাম ও আলাদা আলাদা গোত্র বা বৈচিত্রের যে সমন্বয়ে রয়েছে সেগুলো জানার মাধ্যমে তাদের পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
এজন্য আপনারা আমাদের উক্ত পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জীবের মধ্যে বৈচিত্র্যগত পার্থক্য,জীবের বাসস্থান বলতে কী বোঝায়,বিভিন্ন জীবের বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন প্রকার জীব বৈচিত্রের বর্ণনা দাও, ১০টি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথভাবে জানতে পারবেন।
একটি প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের জীবের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সকল জীবকে একত্রিতভাবে গণনা করা বা জীবের নাম মনের রাখা সম্ভব হয় না।
এক্ষেত্রে প্রতিটি জীবকে আলাদা আলাদা ভাবে এবং জীবের নাম কে মনে রাখার জন্য বিভিন্ন বৈচিত্রের মাধ্যমে জীবকে আলাদা আলাদা ভাবে বিভক্ত করা হয়।
তবে প্রতিটি জীবকে আলাদা আলাদা ভাবে বা জীবের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে আলাদাভাবে মনে রাখার জন্য এবং জীব সম্পর্কে যথাযথভাবে জানার জন্য বৈচিত্রভিত্তিকভাবে জীবের আলাদা আলাদা বিভাগ বা প্রকার উল্লেখ করা হয়। যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সুশৃংখলভাবে বৈচিত্রের উপর ভিত্তি করে জীবজগৎ সম্পর্কে জানতে পারবে।
প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জীবের মধ্যে বৈচিত্র্যগত পার্থক্য
প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জীব রয়েছে। সকল জীবকে তাদের বৈশিষ্ট্যগতভাবে আলাদা আলাদা পার্থক্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিম্নে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জীবের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে তা তুলে ধরা হলো :-
১. জিনগত বৈচিত্র: জিনগত বৈচিত্র্য বলতে নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে জিনগত উপাদানে বৈষম্যের মাত্রা কে বোঝায়।
একটি জীব প্রজাতি প্রত্যেক সদস্য জিনগতভাবে অন্য সদস্য থেকে পৃথক। জিনগত বৈচিত্র্য নির্দিষ্ট এক প্রজাতির সদস্য ভিত্তিক হওয়ায় এ ধরনের বৈচিত্র কে অন্ত:প্রজাজাতিক বৈচিত্র্য বলা হয়।
কোন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র বেশি হলে পরিবর্তনশীল পরিবেশে তার অভিযোজন ক্ষমতা ও বেশি থাকে। কোন প্রজাতির সকল সদস্যের যদি একই ধরনের জিন বেশি থাকে তাহলে সেই প্রজাতিকে কম জিনগত বৈচিত্র সম্পন্ন প্রজাতি বলা হয়।
এসব প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে অন্ত :জননের ফলে একই ধরনের কম জিনগত বৈচিত্র সম্পন্ন সংখ্যার সৃষ্টি হবে। জিনগুলো যদি মারাত্মক রোগব্যাধির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে বংশপরম্পরা এসব জিনিস সঞ্চারণে নির্দিষ্ট প্রজাতির জনসংখ্যা রোগে ভোগে সামগ্রিকভাবে প্রজাতির অস্তিত্ব সংকট বাড়িয়ে তুলবে।
এ কারণে বলা হয়ে থাকে, কোন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র বেশি হলে পরিবর্তনশীল পরিবেশে তার অভিযোজন ক্ষমতা বেশি থাকে, বিলুপ্তির আশঙ্কা কমে যায়।
২. প্রজাতি বৈচিত্র :-জীব বৈচিত্রের মৌলিক ধাপ হচ্ছে প্রজাতি বৈচিত্র্য। বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা যা একটি নির্দিষ্ট সময় ও অঞ্চলে একসঙ্গে বসবাস করে এবং এটিকে বাস্তুতান্ত্রিক সম্প্রদায় গড়ে তোলে তাকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে।
প্রজাতি বৈচিত্রে ভাইরাসসহ পৃথিবীর সকল প্রজাতির জীব অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর সবখানে একই ধরনের যে বাস করে না বরং কিছু অঞ্চলে নির্দিষ্ট প্রজাতির জনগোষ্ঠী অন্যান্য জনগোষ্ঠী অপেক্ষা বেশি দেখা যায়।
যেসব অঞ্চল পুষ্টি ও আবহাওয়া গত উপাদান সমৃদ্ধ সেসব অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের সমাহার থাকে অনেক বেশি। এ কারণে মরু ও মেরু অঞ্চলের চেয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জীববৈচিত্রের মাত্রা বেশি। যে অঞ্চলে প্রজাতি বৈচিত্র বেশি সে অঞ্চল সাধারণভাবে জীববৈচিত্র্যে হটস্পট হিসেবে পরিচিত।
৩. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য: বাস্তুতন্ত্র হচ্ছে একটি জীবন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন প্রজাতি ও তাদের অজীবীয় ভৌত পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা টেকসই পরিবেশ।
প্রত্যেক বাস্তু তন্ত্র শক্তি ও পুষ্টি প্রবাহের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে একভাগ একাধিক বাস্তুতন্ত্র থাকতে পারে। অতএব বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলতে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ ও পুষ্টি চক্রের মাধ্যমে সংযুক্ত বিভিন্ন যুব সম্প্রদায় ভুক্ত প্রজাতির মধ্যে ভিন্নতাকে বোঝায়।
প্রত্যেক বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে নির্দিষ্ট ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবের সমাবেশ। স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতি এবং এদের মধ্যে গতিশীল মিথস্ক্রয়ার এক জটিল নেটওয়ার্ক এর প্রতিনিধিত্ব করে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য। এভাবে এক লক্ষ বছর ধরে এক একটি বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন প্রজাতির পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে গড়ে ওঠে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র।
জীবের বাসস্থান বলতে কী বোঝায়
পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির জীব রয়েছে। পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন জীব পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে গোষ্ঠীবদ্ধ বা এককভাবে বসবাস করে। বসবাসের প্রক্রিয়া বা বসে বসে স্থান কি ওই জীবের বাসস্থান বোঝায়।
অর্থাৎ একটি পরিবেশে একটি বা একাধিক পরিমাণে জীব সারা বছর বা সঙ্গী খুঁজে পেতে অল্প সময়ের জন্য বসবাস করতে পারে। এক্ষেত্রে উক্ত বাসস্থানকে জীবের বাসস্থান বলে।
তবে আবাসস্থলে একটি প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য তার যে সমস্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য বা আশ্রয় প্রয়োজন তা থাকে। বলে একটি ক্ষুদ্র বাসস্থান হল একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা আশেপাশের আবাসস্থল থেকে কিছুটা দূরে বসবাসের জায়গা।
বিভিন্ন জীবের বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন জীবের বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলো :-
→ জীবের সাধারণত চরণশক্তি রয়েছে তাই নড়াচড়া করতে পারে।
→ জীব নিজের খাদ্য নিজে গ্রহণ করতে পারে এবং জীবন ধারণ করতে পারে।
→ জীবের বংশবৃদ্ধি রয়েছে এবং যে প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
→ সাধারণত প্রতিটি জীবের রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়।
→ প্রতিটি জীবেরও অনুভূতির ক্ষমতা রয়েছে। যার মাধ্যমে জীব উদ্দীপনার প্রতি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এবং তার উদাহরণ হল আমাদের শরীরে সুট ফুটলে আমরা বেতন অনুভব করে থাকি।
→ সাধারণত সব জীব শ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগ করতে পারে। তার মৃত্যুর পূর্ব সময় পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারে।
→ প্রতিটি জীবের নিজেদের মধ্যে পারিপার্শ্বিকতার সাথে নিজেদের ক্ষমতাকে সামঞ্জস্য রাখার ক্ষমতা বিদ্যমান। যার মাধ্যমে জীব নিজেদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা নিজেরাই তৈরি করে এবং তাকে অভিযোজন ক্ষমতা বলে।
→ জীব জৈব আয়ন এবং খনিজ আয়ন শোষণ করতে পারে, পুষ্টি গ্রহণ এবং শোষণ করতে পারে। জীব তার দেহে পুষ্টি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে টিস্যু মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অথবা শক্তি ধারণ করে থাকে।
বিভিন্ন প্রকার জীব বৈচিত্রের বর্ণনা দাও
জীববৈচিত্র তিন প্রকার। সেগুলো হলো :-
১. জিনগত বৈচিত্র্য।
২. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য।
৩. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
১. জিনগত বৈচিত্র্য:-নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে জিনগত উপাদানের মধ্যে বৈষম্য মাত্রা থাকলে তাকে জীনগত বৈচিত্র বলা হয়।
এক্ষেত্রে জিনের সঞ্চালনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রজাতির জনসংখ্যা তাদের জিনের মারাত্মক রোগব্যাধির প্রতি যদি সংবেদনশীল হয় সেক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে প্রজাতির অস্তিত্ব সংকট বাড়িয়ে তুলবে। কোন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র বেশি হলে পরিবর্তনশীল পরিবেশে তার অভিযোজন ক্ষমতা বেশি থাকে, বিলুপ্তির আশঙ্কা কমে যায়।
২. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য:-বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা যা একটি নির্দিষ্ট সময় ও অঞ্চলে একসঙ্গে বসবাস করে এবং এটিকে বাস্তুতান্ত্রিক সম্প্রদায় গড়ে তোলে তাকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে।
প্রজাতি বৈচিত্রে ভাইরাসসহ পৃথিবীর সকল প্রজাতির জীব অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর সবখানে একই ধরনের যে বাস করে না বরং কিছু অঞ্চলে নির্দিষ্ট প্রজাতির জনগোষ্ঠী অন্যান্য জনগোষ্ঠী অপেক্ষা বেশি দেখা যায়।
৩. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য:-বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলতে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ ও পুষ্টি চক্রের মাধ্যমে সংযুক্ত বিভিন্ন যুব সম্প্রদায় ভুক্ত প্রজাতির মধ্যে ভিন্নতাকে বোঝায়।
প্রত্যেক বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে নির্দিষ্ট ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবের সমাবেশ। স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতি এবং এদের মধ্যে গতিশীল মিথস্ক্রয়ার এক জটিল নেটওয়ার্ক এর প্রতিনিধিত্ব করে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
আরো পড়ুন: জীব বৈচিত্র্য কাকে বলে
১০টি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম
বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। এবং বিভিন্ন জীবের মধ্যে প্রাণীদের বৈজ্ঞানিক নাম উল্লেখযোগ্য। বৈজ্ঞানিক নাম উল্লেখ করা হলো :-
১. দোয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম :- Copsychus saularis,,,
২. সামুদ্রিক কাছিমের বৈজ্ঞানিক নাম :- Caretta caretta,,,
৩. অস্ট্রেলিয়ান লাংফিস এর বৈজ্ঞানিক নাম :- Neoceratodus forsteri,,
৪. ডলফিন এর বৈজ্ঞানিক নাম :- Plantanista gangetica,,,
৫. লাল ক্যাঙ্গারুর বৈজ্ঞানিক নাম :- Macropus rufus
৬. বাংলার বাঘ এর বৈজ্ঞানিক নাম :- Panthera tigris
৭. নেংটি ইঁদুরের বৈজ্ঞানিক নাম :- Mus musculus,,,
৮. Octopus বৈজ্ঞানিক নাম :- Octopus macropus,,,
৯.ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম :- Tenualosa ilisha,,,
১০. সিলাকান্থ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম :- Latimeria chalumnae
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের জীবের বৈচিত্র্যগত পার্থক্য ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আশা করি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের জীবের মধ্যে যে বৈচিত্র্যগত পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা যথাযথভাবে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।