জন্মের পর নবজাতক শিশুর সর্দি হলে শিশুর জন্য অনেক কষ্টদায়ক, এই সময় সর্দির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই শিশুকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো উচিত।
অতিরিক্ত সর্দি হলে নবজাতক শিশুর ফুসফুসে কফ জমতে পারে। এমনকি নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অন্যদিকে নবজাতক শিশুর নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট একটি মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, নবজাতক শিশুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে করে শিশুর মা এবং শিশুর কোন প্রকার ঠান্ডা না লাগে।
নবজাতকের সর্দি হলে করনীয়
নবজাতক শিশুর সর্দি-কাশি হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে-
- শিশুকে আবহাওয়া অনুযায়ী সবসময় উষ্ণ রাখতে হবে।
- যদি শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে, পাতলা কাপড় দিয়ে ঘন ঘন নাক পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- ঘনঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।
- স্বাভাবিক খাবার সহ তরল জাতীয় খাবার খেতে দিন।
- কাশি কমানোর জন্য কুসুম গরম পানি, লেবুর রস ,তুলসী পাতার রসের সাথে মধু, দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
শিশুর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ সব সময় ঘরে রেখে দেওয়া উচিত। তাহলে চলুন জেনে নিই কি কি ঔষধ ঘরে রাখবেন –
১.প্যারাসিটামল: জ্বর সারানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ঔষধ হচ্ছে, প্যারাসিটামল, ড্রপ, সিরাপ, ইত্যাদি। তবে শিশুদের জন্য সিরাপ বেশি উপকারী।
২.অ্যান্টিহিস্টামিন:অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ শিশুদের সর্দি-কাশি ,এলার্জি,জন্য বেশ উপকারী।
৩.ড্রপ: ঘরে সব সময় নাকের ড্রপ রাখা উচিত, শিশুদের জন্য ড্রপ খুবই উপকারী,
১ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
শীতকালে সাধারণত বাচ্চাদের ঠান্ডা জ্বর লেগেই থাকে। শীতের আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে সহজে বাচ্চারা রোগে আক্রান্ত হয়,
নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম, এ জন্য তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে, তাহলে চলুন কোন কাজ গুলো করা যেতে পারে –
- বুকের দুধ: মায়ের বুকের দুধ শুধু নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে না, যে কোন ধরনের বাচ্চার সর্দি ও কাশির নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী, মায়ের দুধই হলো সকল সমস্যার সমাধান।
- ১ মাসে বাচ্চার সর্দি লাগলে সব সময় গরম কাপড়ের মধ্যে রাখতে হবে। যাতে বাইরে থেকে কোনো বাতাস না লাগতে পারে।
- ১ মাসে বাচ্চার সর্দি লাগলে বুকে সরিষার তেল গরম করে মালিশ করে দিতে হবে। এতে করে সর্দি এবং কফ দুটোই দূর হয়ে যাবে ।
- সরিষার তেলে থাকে ভিটামিন, যা বাচ্চাদের শরীর সবসময় গরম রাখে।
২ মাসের শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয়
দুই মাসের শিশুর যদি কাশি হয় তাহলে সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ শিশুর বয়স এখন কম এদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কম,
এজন্য যেকোনো ঔষধ খাওয়ানো যাবে না, এ জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে ঔষধ ছাড়াই, ঘরোয়া উপায়ে শিশুর সর্দি কাশি দূর করার। যেমন-
- ২ মাসে শিশুর সর্দি হলে ঠান্ডা দুধ খাওয়ানো যাবে না।
- ঠান্ডা দুধ খেলে কাশি আরো বেড়ে যাবে, তাই হালকা গরম করে দুধ খাওয়াবেন।
- শিশুর কাশি দূর করতে কয়েকটি তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে রস করে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
- এতে দ্রুতই সর্দি- কাশি শেরে যাবে।
- এই সময় বাচ্চা কে সর্বদা যত্ন করুন, কারণ সামান্য ঠান্ডা কাশি থেকে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে।
২ মাসের শিশু কে সর্বদা সুস্থ রাখার জন্য উল্লেখিত পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। এতে আপনার শিশু সর্বদা সুস্থ থাকবে।
৪ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
৪ মাসে শিশুর সর্দি- কাশি হলে সব সময় গরম কাপড় পড়িয়ে রাখবে, গরম পানি খেতে দেবেন। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন গোসল করাবেন, তাছাড়া সর্বদা গরম পানিতে গোসল করাবেন।
শিশুকে তিন থেকে চারটে তুলসীর পাতা রস করে দুই ফোঁটা মধু দিয়ে এক চামচ করে খাওয়াতে হবে, এতে সহজেই সর্দি শেরে যাবে।গরম জলে স্নান করাতে হবে। শিশুর সাথে সাথে মাকেও সব সময় ঠান্ডা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
আবহাওয়া জনিত সমস্যার কারণে বাচ্চাদের সব সময় ঠান্ডা লেগেই থাকে। বাচ্চাদের এমন সমস্যা মুক্তি পাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে।
- গলা ব্যাথা হলে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা বেন।
- বেশি বেশি তরল পদার্থ খেতে দিন।
- কাশি উপশম কমাতে মধু খাওয়ান।
- নাক বন্ধ থাকলে নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপ কিনবেন।
৮ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
শিশুর ঠান্ডা জনিত সমস্যা হলে সর্বপ্রথম ঘরোয়া উপায়ে ঠান্ডা কমানোর চেষ্টা করতে হবে, যদি না কমে তখনই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে গরম পানি খাওয়ান।
- এক চিমটি শুকনো আদার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ান।
- আধা কাপের কম পরিমাণে জিরা গুড়া,রসুন, এক কাপ সরিষার তেল গরম করে শিশুর পিঠে মালিশ করুন।
- লেবুর পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়ান এতে করে শিশুর শ্বাসতন্তে ব্যাকটেরিয়া দূর করবে।
৯ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
শিশুদের কাশির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার-
- গরম তরল খাদ্য পান করান: শিশু ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি খাওয়াতে হবে, এতে করে শিশুর গলায় ব্যাথা থেকে আরাম পাবে ।
- অ্যালোভেরাঃ শিশু ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা রস ও মধু মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার হয়।
- শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উঁচু করে রাখুনঃ শিশুকে শোয়ার সময় মাথা উঁচু করে শোয়াতে হবে।শিশুকে উঁচু করে না শোয়ালে গুরুতর কাশি হয়, শরীরের অসুস্থতা কমা যেমন তেমন আরো বাড়ে ,এ জন্য শিশুকে শোয়ার সময় মাথা উঁচু অবস্থায় রাখতে হবে । এতে করে শিশু আরাম পাবে এবং অসুস্থতার উপশমের সহায়তা করবে।
নবজাতক শিশুকে সর্বদা সুস্থ রাখতে হলে উপরোক্ত কাজ গুলো করতে হবে, ফলে শিশু এবং মা দুই জনেই সুস্থ থাকবে।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। আপনার অসুস্থতার উপর ডাক্তার যে ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে বলবে, আপনার সেগুলোই ব্যবহার করা উচিত।